উনিশশো একাত্তর সালের সাতই মার্চে
মোজাম্মেল সুমন


উনিশশো একাত্তর সালের সাতই মার্চে রমনা রেসকোর্স ময়দানে মহাজনসভায়-
বাঙালির তনুমন অনুরণিত হয়েছিল মুজিব ভাষণের সেই উদ্দীপনায় ।
তখন সাতকোটি মানুষের মনে প্রজ্বলিত ছিলো যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আগুন,
পাকিদের সব নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালির ছিলো তাই বদলা নেবার নেশা দ্বিগুণ ।


সেইদিন সাতই মার্চে সকল বাঙালির চোখেই ছিলো যে বিদ্রোহী ফাল্গুনের আভাস,
মুখে ছিলো প্রতিবাদের ভাষা আর মনে ছিলো অদম্য সাহসী বিজয়ী প্রয়াস ।
ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জয়োল্লাসে অমোঘ অটুট ছিলো বজ্রমুষ্টিবদ্ধ হাত,
বাংলাজুড়ে একটি ইশারার অপেক্ষায় ছিলো স্বাধীনতা পেতে গৌরবিত প্রভাত ।


সেই জনতার কণ্ঠোষ্ঠ্যে ছিলো অমর স্বাধীনতা লাভের মুগ্ধায়িত গানে সুরালাপ,
পেতে এই বাংলার মাটি রৌদ্রজলে জীবনের পরতে পরতে স্বস্তির সুবাসিত গোলাপ ।
একটি মুজিবের শির নত না হওয়া ও তর্জনী আঙুলের সেই সুনির্দেশিত অপেক্ষায়-
এই বাংলার সুষ্ঠু সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক মুক্তি আশায় ।


সেই রেসকোর্সের পুরো ময়দানে জনসমুদ্র উত্তালতায় মানুষের চোখ ছিলো উৎসুক,
একটি মুজিবের কথা শুনতে জাগ্রত পাহারায় বাঙালি ছিলো একেবারেই উন্মুখ ।
চিরচেনা সেই শেখ মুজিবুর রহমান আলোর প্রদীপ হয়েই জনমঞ্চে উঠলেন,
সেই তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে 'এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম' বললেন ।


জেগে উঠেছিলো এই বাংলার আকাশ, অনুপ্রেরণায় সব বাঙালি হয়েছিলো মুগ্ধ,
বিশ্বের বুকে ঘটেছিলো নয় মাসের অপূর্ব ইতিহাস- বাঙালির স্বাধীনতাযুদ্ধ ।
একটি মুজিব, একটি ভাষণ, একটি স্বাধীনতা, একটি স্বপ্নে বিভোর সাতকোটি সমাবেশ;
একটি বিজয়, একটি পতাকা, একটি জাতি ও একটি মানচিত্র- একটি যে সোনার বাংলাদেশ ।


একটি মুজিবের সেই ভাষণ এখন ইউনেস্কো কর্তৃক যে ঐতিহাসিক এক দলিল,
মুজিব মানেই বাংলাদেশ- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি- দেশ গড়তে সাবলীল ।
মুজিবের সেই ভাষণ শোনা মাত্রই কল্পনায় হয়ে যাই রেসকোর্স ময়দানের জনতা,
রাজনীতির কবি- মানুষের কবি শেখ মুজিবুরের তরে উৎসর্গ আমার এই কবিতা ।