নিস্তব্ধ গভীর রজনী,
চারিপাশে আঁধারের হাতছানি।
অবাক ধরণী-যেন
শব্দশূন্য মৃতের গোরস্থান!


রাতের আকাশপানে
দুটি জলভরা চোখের আস্ফালনে,
কেঁপে কেঁপে উঠে হাজার,লাখো তারা,
কালো মেঘগুলো যেন নীড়ের খোঁজে দিশেহারা!
অপলক চেয়ে থাকা সেই দুটি আঁখি,
যেন কোনো মৃতের সন্ধানে,যেন দিতে না পারে ফাঁকি!
হঠাৎ বক্ষ কেঁপে উঠে,
হৃদয় ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়,
রক্তশূন্য হতাশ মুখমন্ডলে কাঠিন্য দূর হয়,
সমগ্র শরীরের রক্তগুলো হীম হয়ে আসে!
দু'চোখে জল ঝড়ে,
বুকে দাপটিয়ে নরপশুটা চিৎকার করে উঠে,
রাতের বুক চিড়ে সেই চিৎকার দশদিকে ছোঁটে যায়-
দূরে-বহু দূরে,সে চিৎকার কোনো মৃতের কানে
রক্তখেঁকো জানোয়ারের মতো মনে হয়!
কেউ কেউ বলে-এ কোন পিশাচ!জানোয়ার!
কেউ হয়তো বলে-অমানুষ!


চোখে ছলছল জল,
বুকে হাহাকার,
মনে অশান্তি,
নিঃশ্বাস অনিয়মিত,ভয়ঙ্কর!
কিছুক্ষণ পরপর দীর্ঘশ্বাস,শান্তি
না শ্রান্তি!বিবেকের দংশন!
ভেসে যাওয়া সেই চিৎকার ফিরে আসে প্রতিধ্বনি হয়ে,
কান পেতে শুনে মনে হল কোনো পশুর হাহাকার!
অবাক পৃথিবী,বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে
অসংখ্য নক্ষত্রের মতো চক্ষু মেলে!
কেন?অমানুষকে দেখার ছলে?
না-একটু করুণা করার জন্য কোনো হতভাগ্যকে?


হয়তো রাশি রাশি মেঘ জমা হবে আকাশে,
বুক ফাঁটা মেঘের গর্জন ভাসবে বাতাসে,
বিজলীর ঝলকানিতে সজ্জিত হয়ে
নামবে বারিধারা-শীতল পৃথিবীর গায়ে!
ধুয়ে মুছে যাবে সকল পাপ,পঙ্কিলতা,
জরা,মরা!মৃতের প্রাণে হবে প্রাণের সঞ্চার,
সবাই উঠবে জেগে,আয়েশে,আবেগে!


কিন্তু ঐ অমানুষটার হাহাকার,অশ্রু!
হয়তো আকাশের জলধারার নিকট নগন্য,
হয়তো তাহার বুক ভাঙা শব্দটা অতি জঘন্য!
এতজল হয়তো লোনা হবে না এটুকু অশ্রুতে!
হয়তো বসন্ত আসবে চলে,
গাছে গাছে নতুন পত্র-পল্লব কুড়ি-পুষ্পের সমাহারে,
মৌমাছি,ভ্রমর অথবা অসহ্খ্য পাখির ঝাঁকে
মিষ্টি সুরে তারই আগমনী গান ভাসবে বাতাসে!
দক্ষিণা বাতাস দোল খেয়ে যাবে শাখায় শাখায়,
সেই আবেশে দুলবে সকল মানব মন,
উতলা হোয়া মাতাল সুরে কেউ বাঁশি বাজাবে!
কিন্তু এ অমানুষটার?
বুকে হাহাকার আরো তীব্রতর
হবে,বুকের চিনচিনে সুর আরো ব্যথিত করবে,
কেউ চেয়ে দেখবে না,প্রয়োজন নেই!
শুধু একটু ধিক্কার আর সূঁচালো প্রশ্নের বানে
জর্জরিত তিক্ত মুখপানে তাকানোর অবকাশ নেই!


অমানুষ!মানুষ হোয়ার সুযোগটুকু পায় না!
ধরণী যেন তার নিকট দায়বদ্ধহীন!কিছু চায় না!
আপন বিশ্বে,আপন পথে,আপন মনে তার বিচরণ,
তার সৃষ্টি,সংস্কৃতি সব,আড়াল থাকে মনের দেয়ালের!
হঠাৎ কোনো একদিন বোশেখী ঝড়ে,
মানব মাঝে উৎকন্ঠা জাগায়,নির্ঘুম রাত কাটায় সবে,
বিধাতার নাম জপে,সকল পাপের পরিত্রান চায়
কেঁদে কেঁদে!কেউ বুঝে ন অশ্রুজল কতোটা লোনা!
সকল পাপ বিধাতার কাঁধে চাপিয়ে নতুন দিন যাপন শুরু,
তবুও সে অমানুষটার খবরও কেউ রাখে না,এতে পাপ হয়!


দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রাতের অন্ধকারে,
কুয়াশার‍্য আবৃত শীতার্ত ঠান্ডা রাতের বুক চিড়ে,
সে নিঃশ্বাস প্রকম্পিত হয় উত্তরী বাতাসের দোলায়!
মএ তার দ্বিধান্বিত প্রশ্নের তোলপাড়,কাকে বলবে?
কে দেবে জবাব-তার প্রশ্নের?
সহসা দূরে কোথাও একঝাক শিয়ালের বুকভাঙা আর্তনাদ,
জানোয়ার বলে?না মানুষের অভ্যন্তরস্থ জানোয়ারটাকে দেখার ফলে!
আবারো দীর্ঘশ্বাস!হায়রে অমানুষ!
মানুষখেঁকো না হলেও!ভিতরে অমানুষ নেই বলে!
ভিতরে বিবেকের হাহাকার আছে বলেই অমানুষ!
প্রেমের আরেক নাম তাই বুঝি জ্বালা!


ধীরে ধীরে রাত পোহায়!
অমানুষটার নিজের ঘড়ে আশ্রয় নেয়!
=====<মন>=====