বাড়ি ফিরে সেদিন আমার বাবা
ডাকিল মায়েরে কাছে,
-এই শুনে যাও,তাড়াতাড়ি এসো
বস তুমি মোর পাশে!


মা জননী মোর সব কাজ ফেলে
ছুটে এল তার ডাকে,
-বল তাড়াতাড়ি,বসব না এখন
ব্যস্ত আছি তো পাকে।


বাবা বলেন-ধর এই কাপ,
পেয়েছি পুরষ্কার,
বিশাল আয়োজন ছিল আজ
পদগোলক খেলার।


চ্যাম্পিয়ান তো হয়েছি আমরা
৩-১ গোলে খেলায়,
দু'টো গোলই তার আমি করেছি
প্রথমার্ধের বেলায়!


মা শুনে হাসে-বুড়ো বয়সে
এ কোন ভূতের আছর,
পারব না-বুঝলে,করতে সেবা
যদি গায়ে আসে জ্বর!


বাবা বলেন বেগে-চার গাধারাম
সোনার টুকরো ছেলে,
এতটা বছরে একটা কিছু
পুরষ্কার কি পেলে!


দেখ আমি এই বুড়ো বয়সেও
জেতার ক্ষমতা রাখি।
মা তো হেসে খুন-বলে,
যাও,যাও,মোর সব কাজই বাকী!


ছোট ভাইটি ছিল ঘরে,সে
হঠাৎ উঠল বলে-
স্কুলে রেখে দেয় সব পুরষ্কার
কোনো খেলায় জিতিলে!


বাবা বলে-হা,আর মানুষে
পায়না পুরষ্কার?
নিজে পায়না স্কুলেরে করে
শুধু শুধু তিরস্কার!


শুনে সব কথা এতদিন পর
গতকাল ঘরে বসি,
চোখ খুঁজে ফিরে গোপন জায়গা
মুখে ধরে রেখে হাসি!


ভাবি,এ আমার পাগল বাবা-
যুদ্ধে যুদ্ধে গেল জীবন,
এখনও কেমন যৌবন জোরে
উচ্ছ্বসিত দেহ-মন!


মনে মনে কাঁদি,মুখে মুখে হাসি,
ভাবি-বৃথা মোর এ জনম,
আজো মোর লাগি বুড়ো এ বাবা
করে দিন রাত পরিশ্রম!


কোনো স্বপ্নই আজো আমি তার
করতে পারিনি পূরণ,
এ কথা ভাবলে মনেতে উঠে
ব্যথার বিষ ফোঁড়ন!


যতবার আমি থমকে গিয়েছি
চলতে আমার পথে,
ছায়া হয়ে মোর পিতা থেকেছেন
সদাই আমার সাথে।


তবুও আমি এতো অলস,অধম,
নীচ,হীন,জড়-বোকা,
সকল স্বপ্ন ভুল বানিয়ে দিয়েছি তাহারে ধোঁকা!


আজি তার কাছে ক্ষমা চাই আমি
পিতা হে,করো ক্ষমা,
তব পদতলে মস্তক মোর
আজ দিয়ে গেণু জমা!


পদধূলি সেথা লাগিয়ে দিও
আমার কপাল ভাজে,
এই হয়ে রবে চিরসঙ্গী
আমার সকল কাজে!


সখের জীবন চাই না রে বাপ
গড়তে আমি কভূ,
তাইতো তোমার স্বপ্ন বৃথা
ক্ষমিবে না জানি প্রভূ।


যে ঘাম ঝরায়ে মানুষ করেছে
পেটে দিয়েছে আহার,
সে ঘাম ঝরায়ে পা ধোয়ে দেব
আমি মোর মা-বাবার!


দুপুরে না খেয়ে,রাতে না ঘুমিয়ে
করেছেন মোরে লালন,
আজি আমি তার সমুখে কেমনে
বসি,পেতে সুখ আসন?


পারি না কো আর ধরিতে অশ্রু-
দির্ঘশ্বাস বাড়ে প্রতি দমে,
বাবা,আজ তোমায় সালাম,
এ জীবন লিখিনু তোমার নামে।
=====<মন>=====