আমি হাঁটতে পারিনা।শরীর ভারী লাগে।
আমি কোথাও যেতেও পারিনা।ক্লান্তি লাগে খুব।
আমার বাবার চাকরি চলে গেছে হঠাৎ করে।
এনজিওর চাকরি।বিশ বছরের চাকরি এক সেকেন্ডেই চলে গেছে।
বাবার কি অপরাধ ছিল তা-ও জানিনা।
এনজিওকে অবশ্য কোনো দোষ দেয়া যায়না।
তাদের কাজ মানুষ ভাড়া করে কাজ করানো।
মানুষের জীবনের দায় কিংবা জীবিকা তারা দেখেনা।
আমার বাবাও হাঁটতে পারেননা।শরীর অবশ হয়ে আসে।
তিনি আজকাল দাঁড়াতেও পারেননা।যেন পায়ের নিচে পুলসিরাত।চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম।
যেন তিনি পা বাড়ালে নিচে পড়ে যাবেন।
আর পুলসিরাতের নিচে ভয়াবহ উত্তাপ।
আমার মা বোধহয় সে উত্তাপ কিছুটা টের পেয়েছেন।
তিনি কথা বলেননা।কিংবা চাইলেও বলতে পারেননা।তার অবসাদ শরীর জুড়ে।
তিনি শুধু শুয়ে থাকেন।আর ভাবেন।
নিরবে ভাবেন কিন্তু এই পৃথিবীর জটিল হিসেব আর মিলেনা।কিছুই মিলেনা।
কারেন্ট বিলের হিসেব,গ্যাস বিল আরো কত বিল!
না খেয়ে থাকলেও নেতাভাইকে ট্যাক্স দিতে হয়।
সে-ই ট্যাক্সের হিসেব।
আমার মা সারাজীবন হিসেবই কষে যান।
আমার মনে হয় সব হিসেব পুড়ে ফেলি।
ছাই করে দেই খেই হারানো এই পৃথিবীকে।
আমার মায়ের অসুখ বাড়ে,বাবার চাকরিবিহীন জীবন বাড়ে।
আমাদের হিসেব আরো জটিল হয়।
মানুষের কত রূপ দেখি!কেবল আমি না,আমার বাবা মা-ও দেখেন।
তারা অবাক হন,তাদের কষ্ট বাড়ে।
আত্মীয়স্বজন বিরক্ত হয়।
বন্ধুবান্ধব বিরক্ত হয়।
পাওনাদারেরা বাড়ি এসে তাদের হিসেব শুনিয়ে যায়।
ঝড়-তুফানে আমরা কাঁপি।
সবাই মুখে পান চিবাতে চিবাতে বলে,"এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল!"
আমি কিছুই করিনা।অবাকও হইনা।
আমি সব শুনি আর দেখি।
আমি হাঁটতে পারিনা।কোথাও যেতে পারিনা।
আমার কিছু করার নেই।আমি বড় হইনি।
এই পৃথিবীকে গিলে খাওয়ার মতো বড় হইনি।