প্রিয় সভ্যতা,আপনাকে বসন্তের শুভেচ্ছা।


দেখুন,আমরা বসন্তের প্রথম দিন উৎযাপন করছি আজ।


আর এইদিনে কোকিলের ডাক যেন বিস্মৃত অবহেলার গুঞ্জনে-


আমাদের অমৃতের দিকে আহবান জানাচ্ছে।


যে অমৃত হাতে নিয়ে অনেক আগে থেকেই আমি মহাজগতের পথ হেঁটে


আজ এই পৃথিবীর বুকে দেবকাঞ্চনের উল্লসিত প্রহরে বিমূঢ় হয়ে আছি।


আজ আমাকে রুদ্রপলাশের সৌন্দর্য কিংবা পলাশ-শিমুলের গল্প বলে প্রকৃতি একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের দিকে নেয়ার চেষ্টা করছে।


বিচক্ষণ আকাশলীনা আমাকে সংসদ ভবনের দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে।


গণতন্ত্র মূর্খের শাসন নাকি জ্ঞানীর সেই জটিল বিতর্কের দিকে সম্বোধন করে।


আমি সংবিধানের দিকে তাকাই কিংবা কনকচাঁপার দিকে।


কিন্তু,বসন্তে যেভাবে পাথরকুচির রেনেসাঁ আমাদের আন্দোলিত করে সেভাবে নানান অপরাধের রেনেসাঁস আমার চোখকে ধাঁধিয়ে তোলে।


ভাবিয়ে তোলে।


মাংস ও রক্তের উল্লাস আজ এই বসন্ত বরণীয়া উৎসবকে আমার চোখে ম্লান করে দেয়।


আমার এই নীলগ্রহকে শক্তিশালী একটি অমানবিক ধূলিপুঞ্জ বলে মনে হয়।


মানুষের সাথে পশুর তুলনামূলক পার্থক্য নাসার জেমস ওয়েবেও যদি ধরা পড়ে-


তবুও আমি প্রয়োজনীয় অনুভূতির অভাবে বিশ্বাস করতে পারবোনা।


এই অন্ধকার বসন্ত আমার রুগ্ন নির্বুদ্ধিতায় সরল প্রাণ দেয়।


আমি নির্বোধের সুহৃদ হয়ে অনেকগুলি বই পুড়িয়ে দিই।


বইগুলোতে সরলতার গল্প ছিল,পরিশ্রমের নীতি লিখা ছিল।


আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রেমের কথা ছিল।


ফ্রয়েডের স্বপ্নের ব্যাখ্যার পাশাপাশি মায়াবতীদের রূপকথা ছিল।


'মানুষের মন আছে ' নামে বিলুপ্ত একটি সত্যের উপর ইশারা ইঙ্গিতে লিখা বেশ কজন বুদ্ধিজীবীর দীর্ঘ কলাম ছিল।


বসন্তের সুবাসে,চাঁদের স্নিগ্ধতায়-


তারার মৃদুতাপ আলো আমার মাথার উপর দিয়ে চলে যাওয়া-


স্যাটার্ন-৫ রকেটের মতো অধরা থেকে যায়।


শহরে,মফস্বলে,গ্রামের প্রতিটি মার্গে


একেকটি ধূমকেতু জ্বলে জ্বলে নিভে যায়।


ধূসর রঙের পাঞ্জাবি পরা কয়েকজন কবি


চশমার ভাঙা ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে থাকেন মাথা নিচু করে।


'O Captain! My  Captain!' বলে ডেকে ডেকে রাস্তার ওপাশের মেলায়


বাসন্তী শাড়ি পরা উর্বশীদের দিকে তাকিয়ে থেকে কখন যে নিজেদের চশমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন সেই খবর রাখতে তারা ভুলে গেছেন!


এদিকে ক্যাপ্টেনরা এসে হাজার হাজার বছর ধরে তাদের ডাকে সাড়া দিয়েও তাদের কবিতার হরফ হতে পারেননি।


জলবন্দর,বিমানবন্দর,স্টেশন সবকিছুতেই উন্মাদসম ভিক্ষুকরা


মানবতার দান গ্রহণ করছেন মানবতার মূল্যে।


বসন্তের ফুলের মতো 'মানবিক' কিছু 'পশু' নতুন দর্শনের জন্ম দিয়েছে।


"মানুষকে 'লাশ' না করে দিলে নাকি পৃথিবীর পবিত্রতা থাকে না!"


মিথ্যে,অবিশ্বাস আর ক্রোধের গল্প ঠিক কৃষ্ণচূড়ার মতোই আমাদের চোখে ফোটে।


ছায়াছবির মতোন চঞ্চল হয়ে ভাসে নৈতিক নিষ্ঠুরতা।  


আমি নূহের নৌকা এবং যিশুর ভালোবাসার কাছে আশ্রয় চাই।



আজ এইদিনে,আমি তাই,প্রণয়িনীর চোখের দিকে তাকাতে পারিনা,হে সভ্যতা।


তার চোখ রক্তিমাভাব।


আমি তাকে 'ভালোবাসি' বললে এক্ষুনি সে কেঁদে ফেলবে।


কেননা,কয়েক কোটি বছর আগে সে আমাকে করজোড়ে অনুরোধ করেছিল-


অন্তত আমি যেন তাকে মিথ্যে না বলি।


        -০-