একটা ধূমকেতু আমাকে জাগিয়ে দিলো একদিন-
যার গতিপ্রকৃতি কিংবা ধরন এডমন্ড হ্যালিও হয়তো নির্ণয় করতে হিমশিম খাবেন।
ধূমকেতু কিংবা নক্ষত্রের অংশটিতে যে কার্বনের রূপ আর আম্যোনিয়া ছিল না তা আমি নিজেও বুঝেছি।
সবচেয়ে রহস্যময় ছিল ধূমকেতুটির জবান,অর্থাৎ,মুখের ভাষা।
এটা তার মুখের ভাষা নাকি মনের ভাষা নাকি চোখের ভাষা সেটাও অবশ্য আমি নিশ্চিত না।
তবে কিছু একটা ছিল তার কথাগুলোয়।
অমোঘ ইশারা-যা ক্ষণদ্যুতির মতো স্পৃষ্ট করে,আঘাত করে।
নির্মোহ আহ্বান-যা মহাকালে অবস্থানরত মানবিক বিপর্যয়কে ঠেকাতে চায়!
তার বাণীতে বৈশ্বিক সংকট থেকে তরণের আদ্যোপান্ত থাকাটা আমার কাছে না যতটুকু মনোহর,
তার চেয়েও ঐন্দ্রজালিক তার ভাষার নিত্যতা,বক্তব্যে সত্যের একটা সূক্ষ্ম স্ফূরণ-
যা হাজার বছরের গম্ভীরতা আর এনট্রপিকে নাড়িয়ে দেয়,
বিশ্বাস-অবিশ্বাসে দোদুল্যমান মানবাত্মাকে পেন্ডুলামের হিসেবে দ্বিধান্বিত করে।
একটা দুর্বোধ্য সূত্রে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুভূতি আর সত্যের বোধগম্যতাকে সমাকলন করতে শেখায়।
অন্তরীকরণে দক্ষ দুর্বল মানবমন যোগজকলনে কষ্ট পায়।
কষ্ট পেতে থাকে।
স্থূলদৃষ্টিতে প্রীতিকর আর শুভ্র কর্তব্যগুলোতে প্রতীয়মান ইবলিশ নিজের পরম্পরাকে ছড়িয়ে দেয়,
সময় আসার আগেই প্রিয়ার চাহনি ঘোলাটে হয়ে যায়,
কিশোরের দল বারান্দায় দাঁড়িয়েও দক্ষিণা বাতাসকে অনুভব করতে পারে না।
খোলা মাঠ,রাস্তা কিংবা ছাদে দাঁড়ালে তারা মৃদু হাওয়ার ছোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে।
রাজা-মন্ত্রীকে,প্রণয়ী-প্রণয়িনীকে,শাসক-শোষিতকে,আমি-তোমাকে স্পর্শ করতে পারি না।
কেমন যেন একটা জৈব-রাসায়নিক পরিবর্তন এসে আমাদেরকে যোগাযোগ বৈকল্যে ভোগায়।
ভাড়াটে দুর্বৃত্ত কিংবা স্বেচ্ছাসেবী আততায়ীরা আমাদের মহাকালে-
পৃথিবীর অভ্যন্তরে গ্রহগুলোর চেয়েও বড় পরিসরে ঘুরতে থাকে।
এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার ফেরশতা তন্দ্রাহারা চোখে তাকিয়ে দেখেন-
আমাকে।
ধূমকেতুকে।
আমরা ডাইনিংয়ে 'অর্থ' আর 'ক্ষমতা' নামে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দুটো পশুকে একত্রে বসে খাওয়ার চেষ্টা করছি।
শাকসবজি হিসেবে পাশে 'লোভ','হিংসা','দেহশক্তি' সহ আরও নানানজাতের খাবার টেবিলে রাখা আছে।
আমরা সবগুলোই কাঁচা চাবানোর চেষ্টা করছি।
ধূমকেতু গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছে। তার বোধহয় সব খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
আমি কিছুই গিলতে পাচ্ছি না। গেলার আগেই বদহজম হচ্ছে।
লাইপেজ,অ্যামাইলেজের পরিপাকতন্ত্র আর কতই বা খেতে পারে!
আমার নিউরন থেকে বিচ্ছুরিত স্বপ্ন একটা অবিদিত তীর্থ খুঁজে পেল।
ধূমকেতু আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে।
কার্বনের একাধিক রূপহীন নিউক্লিয়াসবিহীন সেই ধূমকেতু।
আমি স্থানান্তরিত হবো অন্য কোথাও তার অমায়িক বচন শুনতে শুনতে।
সময় গুনতে গুনতে।
ভাগ্যলিপিকে নিজের করে পেতে-
আমার ভাগ্যহত মাতৃকার জন্য পিছুটান অতিক্রম করে;
জালালিয়াতের অনুক্ষণে প্রবেশ করবো আমি।
রবিঠাকুরের প্রাণে সূর্যের আলো যেভাবে প্রবেশ করে-
প্রভাতপাখির গানে যেভাবে প্রাণ জেগে ওঠে-
আলোকিত জগতে আরও মায়া,আরও নক্ষত্র,আরও ঘ্রাণ আর-
আরও তহুরার মতো শরাব আমাকে উজ্জীবিত করে তোলে।
ইকবাল আর রুমীকে একত্রে দেখলেও কাছে যাবার সামর্থ্য আমার থাকে না।
আশালতা ঝরে পড়ে,
বিশ্বময় ত্রুটি দাগ ফেলে হরফের নুকতায়।
আমি আরও শক্তিহীন হয়ে বনে যাই-
অতিথিশালায় অভ্যাগত অক্সিজেনের সমষ্টি কেবল।
তোমরা ধূমকেতুকে তাড়িয়ে পৃথিবীকে সূর্যমুখী তেল দিয়ে ভেজে খেতে থাকো।