যখন হাটি হাটি পা পা, কারণে অকারণে কখনো পড়ে গেলে বলত আমায়
ইস! ব্যথা পাসনি তো? দেখে শুনে চলতে পারিস না?
এখন আর কেউ বলে না।
ব্যস্ত যখন ধুলো খেলায়, সকাল দুপুর পেরিয়ে যায় পেটের ক্ষুধা নাহি রয় মনে
তন্ন তন্ন করে খোজে এপাড়ায় ওপাড়ায়, ক্ষুধা লাগেনি তোর? আয় খেয়ে যা।
এখন আর কেউ বলে না।
পাশের বাড়ির সুমন পরীক্ষায় পাশ করে মিষ্টি বিলিয়েছে, একটু ও খায়নি সে রেখে দিয়েছে।
দিন শেষে ঘরে ফিরলে, কোথায় ছিলি বাজান? আয় খেয়ে যা, তুই কি পারবি এমন?
এখন আর কেউ বলে না।
একটু অভিমানেই ঘর ছেড়ে পালাতাম
দিন শেষে বাড়ি ফিরতাম উপোস করে, ফেরার পর ডাকত আমায় ভৎর্সনার ছলে, ক টাকা কামাস এত রাগ? আয় খেয়ে যা, কোন সাড়া নাই।
ভাত মাখিয়ে দরজায় দাড়িয়ে, সোনা বাজান রাগ করে না খেয়েনে, আরও কত কি!!
এখন আর কেউ ডাকে না।
যখন আদর করত মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে, তুই ঠিক আমার মাষ্টার মামুর মত
এখন আর কেউ বলে না।
সখ হলো ঢাকা যাব, গাড়ি ঘোড়া দেখে চলিস, কত উৎকন্ঠা কত উপদেশ
বিদায় বেলা চাতকীর মত যতদূর দৃষ্টি যায়, আড়াল হওয়া পর্যন্ত
এখন আর কেউ থাকে না।
স্কুলে যাবার পথে ৪টাকা ভাড়া, কোন দিন থাকত, কোন দিন থাকত না
এ বাড়ি ও বাড়ি ১টাকা ধার করতে ছুটত, কখনো খুব রাগ হত, সামান্য ১টাকা ও তোমার থাকে না?
অসহায়ত্ব চোখে মুখে! দৈনিক এত টাকা কনে পাব!!
এখন আর কেউ খোজে না।
খোকা বড় হলে ঘুচবে দুঃখ এটাই ছিল আশা, দীনতা কাটবে সবাই হাসবে
কত গর্ব কত প্রত্যাশা তার, সমাজে হেয় হবে না আর
এখন আর কেউ ভাবে না।
আশার কুঁড়ি ঝরে পড়ে, কী জানি কি অভিমানে হারিয়ে গেল না ফেরার দেশে
বাতিহীন, বিছানাহীন, সঙ্গীহীন, শব্দহীন ভাবতেই গা থম থম করত, কখনোই থাকতে পারবে না হেথা
কী জানি কি অভিমানে একাই রয়েছে সেথা।
আমি আসব বলে, সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তীর্থের কাকের মত জেগে থাকতে একা
পাশে দাড়িয়ে হাজার ডাকলে ও বলেনা এসেছিস বাজান! আয় বাপ!!
এখন আর কেউ বলে না।
এখন পৃথিবীটা আধার, হাজার আলোতেও ঘুচবে না কালো, আমি ক্লান্ত শ্রান্ত উদ্ভ্রান্ত পথ হারা
ঘুমের বড় অভাব, আসছি ঘুমাব তোমার পাশে
এখন আর কেউ রুখবে না।