তেত্রিশ বছর আগে
সেই কূল বিনাশিনী জলকন্যা হায়
তাঁর সর্বগ্রাসী থাবায়-
আমাদের আরেকবার করে গ্রাম ছাড়া
আমরা অন্য গাঁয়ে গিয়ে উঠি।
গর্ত ভাঙা প্রাণীর মত আমাদের জীবন ধারা
বেঁচে থাকার সম্বল শুধু বিধাতা আর হাট দু’টি।


বর্ষার পানি বন্দী জড়ো করা ঘরের কোণায়
সাপ-জোঁক পোকা-মাকড় অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে
অর্ধাহার- অনাহারে আমরাও পড়ে থাকি।
কখন জাগবে পায়ে হাঁটা পথ- মাঠের মাটি
কাস্তে কোদাল ক্ষুধার সাথে আবার লড়বো মোরা
অঝোর আলো ঝরা সেই সূর্য ওপেক্ষায়-
ঘোর অমানিশা আকাশ চেয়ে থাকি।


অনেক দিন পর একদিন
পূবের হিজল ডালে দোয়েলের শিস
ঘুমভাঙা পাখির ডানা ঝাড়া শব্দ
মাঠ থেকে বয়ে আসা ধানের গন্ধ
আমাদের স্যাঁতস্যাঁতে ঘরের মেঝ ছুঁয়ে
ছড়ায় পাড়ার বাতাসে।
আমরা জেগে উঠি-
বিছানা ছেড়ে বাইরে তাকাই
ভোরের বাতাস মাঠ ও ধানের ডাক শুনি
এতদিনের দুর্বল দেহে নতুন শক্তি খুঁজে পাই।


তারপর সারা মাঠ সারা গাঁ সারা মাস
ধান কাটা ধান মাড়াইয়ে উৎসব
উনুনের পাশে কিষাণীর কাটে সারা রাত
ভোরের আলোয় গৃহস্তের দুয়ারে দুখিনীর মেলে
স্বপন দ্যাখা বাসন ভরা পানি ভাত।
কৃষকের কাস্তে কোদাল লাঙলে
জেগে ওঠা জমিতে নতুন আবাদ।
আর আমরা যারা দুঃখী শিশু-কিশোর-কিশোরী
বৃদ্ধা বনিতা কুড়ানীর দল
মহোৎসবে কুড়িয়ে ফিরি স্বপ্নের সোনার ধান
লুকিয়ে রেখেছিল যা আমাদের তরে মাঠের কাদা-জল।


আমি যা কুড়িয়ে আনি
তা নিয়েই মা কাটান ব্যস্ত সারা দিন
এখানে শুকায় ওখানে শুকায় ঘেটে ছেঁটে চিটে সরায়
পৃথক করে যে ক’টি শালিন।
ঘট পট-পাত্র ভরে, স্বপ্ন দ্যাখে
তাঁর বেড়ে ওঠা খোকার কর্মী হাত দুঃখ ঘোচার দিন।


সত্যিই সেই মাঠ, সেই কৃষক, কুড়ানীর দল
মানুষে মানুষে, মানুষে মাটিতে নিখাঁদ ভালোবাসা
যে ছবি যে খুবি দেখেছি সেদিন
তা আর এখন তেমন কোথাও মেলে না শারমীন!