ত্রিশ বছর আগে এই নদী
নদীর এই জল
বড় আপন ছিলো আমার।
সকাল-সন্ধ্যা-দূপুর মাঝরাত অবধি
তরতর ছরছর ঝলমল চঞ্চল
তার শরীর ছোঁয়া বাতাস
উড়ে যাওয়া মেঘ, মেঘহীন আকাশ
পালে লাগা আকাশের তল
আরো দূরের ছবি ণীল নীল-নীলাচল
তন্ময় হয়ে ভাবে লয়ে বসে বসে দ্যাখতাম।


সেই নদী ঘেঁষা হাট, হাট ঘেঁষা মাঠ
মাঠ ঘেঁষা গ্রাম- সারি সারি ঘর
আম জাম নারিকেল সুপারী ছায়া নির্ঝর
মানুষের এক মায়ার পরিবেশ।
মাঠের মাঝ বরাবর পুকুর নিশিন্দা হিজল ডুমুর
ডাহুক নকুল হুতুমের বাস।
বিল চিরে খাল, খালের উপর দাসেদের জাল
দুই পাড়ে সবুজ অবুজ ঘাস
সেই ঘাসে বসে ভাবুকের ভাব বেশে
মাঝিদের দাঁড় টানা মাছরাঙার জলে হানা
ঢেউয়ের খেলা বেলা অবেলা অবাক হয়ে দেখতাম।


তার পায়ের নূপুর নাকের নোলক গলার হাঁর
শিঞ্জন শিহরণ নৃত্য ঝংকার মুদ্রা-মূরতি সৌন্দর্য আধার
গোপন গহন দেহের জ্যোতি আঁখির ভাষা চলার গতি
কত জানা ছিল আমার।
তার ওপারের কূল
খেয়াঘাট ঝাঊবন হোগলা কাশফুল
কলাপাতা শরের কবিতা ব্যাকূল
কুড়ানীর ঘর উড়ানীর চর
দূরের সাঁজ ধূ-ধূ করা ঘোমটা বধুর
আরো আরো দূর আরো আরো নীলের নিঝুমপুর
অতৃপ্ত অনিত্য অসীম ঘুঙুর
তার কূলে বসে সব কিছু ভুলে বসে
অজানা এক পুলক আবেশে
মন্ত্রমুগ্ধের মত অধীর হয়ে শোনতাম।
যেমন এখন তোমরা শোন -
রক্ত রাঙা ভক্ত প্রাণ রাগে
আমরা শুনেছি সেই ত্রিশ বছর আগে।