সেদিন দেখি বস্তির পাশে গড়ে ওঠা এক বিশাল প্রাসাদে
খোলা জানালা নীলাভ কাঁচে গিরগিটি এক
দু’পা শূন্যে তুলে ধরতে চায় দূরের চাঁদ
মাথা ঠেকিয়ে আকাশের নীল ছাঁদে।


দেখে দেখে এ অবিবেকীয় খেলা
ভাবলাম গিরগিটির অবশ্যম্ভাবী বিপদ।
বেশি উপরে উঠলে বিবেক পায় কেমন লোপ
দূরাশা করে তারে কত উন্মাদ!
সাবধান বাণী শোনাতে গিয়ে যেই
বলে উঠি, ওহে গিরগিটি
অত উঁচুতে পা শূন্য করতে নেই।
কি আছে ঐ সুদূরের চাঁদে?
বেখেয়ালী পা একবার ফসকালেই
পড়ে যাবে বস্তির খাঁদে
আকাশের চাঁদ উড়বে আকাশেই।
গিরগিটি ক্রোধে গ্রীবা বাঁকিয়ে ভ্রুকুটি করে
বললো আমারে ধমকির স্বরে, এই নালায়েক- অর্বাচীন!
জানিস আমি কে? এ রাজপ্রাসাদে
প্রতিদিন পাড়ি কত জবর সোনার ডিম?
আমার আদেশ মত শাস্ত্রী সেপাই পাইক পেয়াদা কত
চরণ সেবারত
ইচ্ছে করলে পুরো শহরটাই যত্রতত্র
আমার পায়ের কাছে করতে পারি অবনত।
বললাম, ওহে মহিয়সী গিরগিটি! জানি,
তুমি এখন দেমাগে দিশাহীন
ঐ উঁচু প্রাসাদ মাঝে
যতই পাড় জবর সোনার ডিম
তার একটিও আসে না আম জনতার কাজে।
আর নিজ শরীর রক্ষার ক্ষমতাই যে নাহি রাখে
কে ডরায় তার পাইক পেয়াদা শাস্ত্রী সিপাইর হাঁকে?
আরো জেনে রাখো!
যাদের ঘাম ও রক্তে এ প্রাসাদ ঊঠেছে গড়ে
তাঁদেরে এত ছোট ভেবো নাক।
তাহলে একদিন নিশ্চিত নীচে যাবে পড়ে
কুলিন দেহ মলিন হবে বস্তির ধূলি-ময়লা ভরে।


উদ্ধত গিরগিটি হারিয়ে দিশা শাস্ত্রী সিপাই দিতে গিয়ে ডাক
আচমকা ফিরালো যেই মৃণাল শরীরের বাঁক
পা ফসকে জানালা পথে অমনি পড়ে গেলো নীচে।
থেমে গেলো সকল হাঁক ডাক নিমিষে।
‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’
প্রাণে যদিও বাঁচলো সেমতে
গর্বের লেজখানি পড়লো খসে নীচু জনতার ধূলিপথে।


তুমিও জেনে রেখো ঠিক!
অহংকার, ক্ষমতা আর দূরাশার ছায়া
বেশি প্রলম্বিত হলে পতন নিশ্চিত।