হিরণ!
তুই আমাকে একটা কবিতা লিখতে বলেছিলি
জীবনের কবিতা।
আমিও ভেবেছি অনেক দিন
একটা কবিতা লিখি, জীবনের কবিতা
অন্তত তোর জন্য হিরণ।


কিন্তু যখনই শুনি ঘরে চাল নেই, ডাল নেই
পিঁয়াজ রসুন- হাঁড়ি চড়ানোই দায়
দ্রব্যমূল্যের উধঃগতিতে মধ্যবিত্ত উজার প্রায়।
বিনা ঔষধেই ঘরের গৃহিনী
হয়তো আদুরে মেয়েটিও যাবে মারা!
ঘরের বাইরে অনিরাপদ জীবন
মিটিং মিছিল স্লোগান রাস্তায়
গুম-খুন জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির ধারা।
মায়ের চোখের সামনে বাবার চোখের সামনেই
আদুরে সন্তানের লাশ
শিয়াল শকুন নয়-
রক্ত পিপাসু রাণীর কসাইখানার নরপিশাচ
বিকৃত রাজার আমলা, শাস্ত্রী-সিপাই
ঊন্মাদ পোশ্যরাই করে ব্যবচ্ছেদ।
আঁধারে ছিঁড়ে খায় চকচক যুবকের শরীর
কবিতার মত লকলকে ঘুমন্ত শিশুর দেহ।
শান্তি ও সুন্দরের দাবীদার প্রত্যেহ
লাশের মিছিলে শামিল অথবা উচ্ছেদ।


যে দেশে একটি কবিতা লিখতে গেলেই  
অনেক তাজাপ্রাণ রক্তের প্রয়োজন
সন্তানহারা অনেক মা ভাইহা্রা হতে হয় বোন।
যে দেশে কবিতার শিরোনামেই গহনের ক্রন্দন
‘বদ্ধভূমি’ ‘গণ কবর’ ‘রাণাপ্লাজা’ ‘শাপলা চত্ত্বর’
আগে পরে আরো কত কবিতা শিরোনাম
বেদনার মহাকাব্য করেছে রচিত
উৎসর্গ দেশ ও জাতির জন্য।


এখন তুই-ই বল হিরণ!
যে দেশে একটি কবিতা লিখতে গেলেই রক্ত ক্ষরণ
অনেক মেধা ও শ্রম- বেদনা ক্রন্দন
গঞ্জনা বঞ্চনা আগুনের দহন গ্রহণ- বর্জন
বড় দুর্মূল্যে কিনতে হয় কালি ও কলম।
সে দেশে আমি এক অতিসাধারণ
সংসারে আমার সেরকম অর্থ-সামর্থ্য কই?


তাই আর কোন নতুন কবিতা লিখা নয় হিরণ!
ওদের লেখা কবিতাগুলোই এখন
এখানে রাখি ওখানে রাখি দেয়ালে মিনারে টানাই।
ঝাপসা চোখে বার বার উল্টিয়ে পালটিয়ে দেখি
পরম শ্রদ্ধায় হাত বুলিয়ে বুকে মুখে মাখি
লাল সালাম, শহীদ সালাম জানাই।