যে চিঠির আশায় সারা বেলা গ্যাছে
জনতার জীবন অবকাশ ছিল না মনে।
সে চিঠি আসেনি চাঁপা পড়ে আছে
সুকঠিন কাঠের বাক্সে লোহার সিন্দুকে
লাল নীল সবুজ হলুদ স্বপ্নিল খামে।
ভাইয়ের চিঠি বোনের চিঠি
রক্ত ভেজা ত্রিশলক্ষ প্রাণের চিঠি
সবুজ পাতার মত লকলকে তাজা
এক গাদা জীবনের চিঠি।


সে চিঠি পৌঁছেনি শহর থেকে গ্রামে
গ্রাম থেকে শহর বন্দর গঞ্জের পথে
অলি গলি বস্তি রেস্তোরা কলোনি পার্ক
অফিস ষ্টেশন মাঠ ঘাট হাট
অগণিত মানুষের কাছে
হাতে হাত বদল করে প্রিয়জনের চিঠি
পৌঁছেনি এখনো প্রিয়জনের দুয়ারে।


সে চিঠি কুক্ষিগত করেছে সেদিন
কিছু শ্যেনচোখি কালোহাত কালোবাজারের আমলা
সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছিষ্ট প্রিয় কিছু নেড়ি কুকুর
মুষ্টিমেয় শিক্ষিত দেশবৈরী নর্দমার শূকর
উপনিবেশিকবাদের কেনা গোলাম।
ওরা গোপনে দেখে ফেলেছিল
খামের ভিতর লুকানো চিঠির শিরোনাম।
তাই জিপিও’র রুদ্ধদোরে সূর্য ওঠার প্রথম ভোরে
ওরা কুক্ষিগত করে উদাত্ত প্রাণে্র সে চিঠিগুলো।


ওরা শিরোনামেই বুঝে নিয়েছিল
সেগুলো ভীষণ এক রকম বিপ্লবী চিঠি
ভাইয়ের কাছে বোনের কাছে প্রিয়জনের কাছে
জীবনসঙ্গী সহযোদ্ধার দেশপ্রেমিক দেশবাসীর কাছে
সহজ সরল অগণিত জনতার কাছে
বিপ্লবী আত্মাদের অযুত স্বপ্নের চিঠি।
পূর্ণ স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে মজলুম জনতার পক্ষে
অরুণ আলোর উদয় উৎসবে
বাঁচার মত বাঁচতে হবে
আরো হাজার মন্ত্র খোয়াবে
চিঠিগুলো ছিল পরিপূর্ণ নতুন যুগের নতুন বিপ্লবে।


সে চিঠির আলকে বস্তিবাসী সর্বহারা জেগে ওঠার আগেই
কৃষক শ্রমিক কুলিমজুর জেলে তাঁতি খেয়ার মাঝী
রিকসাচালক গাড়োয়ান দারোয়ান ঘুমে থাকার মাঝেই
যুগের ভাগ্য লিখনে এগিয়ে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকা
ছাত্র-ছাত্রী আগুয়ানী পটহের যাত্রী না জানার ফাঁকেই
রাস্তার ধারে থাকা মানুষগুলোর চোখ
সূর্য ওঠার প্রথম আলোক দেখার আগেই
দলবাঁধা শকুনিরা সে চিঠিগুলো নিয়ে বক্র ঠোঁটে
খুব সাবধানে পার হয় অলি গলি লাইপোষ্ট ল্যাম্প
কাঁটাতার ঝোপঝাড় লতাপাতা পুরনো ইটের স্তূপ
ছুবহে কাজিবের আলস্য আঁধার ভীষণ নিশ্চুপ
তারপর লম্বা পায়ে হেঁটে খুব
পুরনো প্রেতায়িত একটা দালান বাড়িতে গিয়ে ওঠে।


তারপর এদিক সেদিক ভাল কের দেখে
সিঁড়ি বেয়ে নামে নীচে পাতালের দিকে।
সিড়ির আড়ালে লাখ চামচিকে
এখানে সেখানে ছড়ানো ছিটানো মল
পোড়া কাঠ কয়লা বাক্স পেঁটরার তল
সামনে পড়ে আছে ময়লা কাপড় ছেঁড়া মাদুর
তেল চিটচিটে বালিশ বিছানা চাদর
ফেলে যাওয়া কোন কিশোর পুরনো নূপুর
কাশির পাত্র খালি বোতল রক্তের দাগ
নীরবতা আঁকড়ে আছে সময়ের অত্যাচারের রাগ।


স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার কোঠা গুমোট গন্ধে উগড়ে ওঠা বুক
তারি এক কোণে রক্ষিত আদিকালের লোহার এক সিন্দুক।
আদি শকুন কোমর গোঁজা চাবিতে তারে খোলে
আড়শোলা ইদুর অমনি ঝরঝর ফরফর ঝড় তোলে।
ভিতরে রাজ্যের পুরনো পুথিপুস্তক নকশা পাঁজি
ভূতপ্রেতের মনতন্ত্রের বই ছেঁড়া কাগজ পত্ররাজি।
শকুনি হাতে সেগুলোরে টেনে তুলে চিঠিগুলি রাখে
তারপর আবার সেগুলো দিয়েই সেই চিঠিগুলি ঢাকে
সিন্দুকে চাবি দিয়ে দরোজাটা দু’হাতে এঁটে
তারপর অফিসে-ঘরে ফিরে যায়
কেহ ঘরে দিবা নিদ্রা কেহবা অফিস তন্দ্রায় কাটায়।
আর জনতার প্রাণের সেই চিঠিগু্লো
সেই সিন্দুকে চাপা পড়ে থাকে, আরশোলা ইঁদুর কাটে।


অথচ
সেই লাল নীল সবুজ হলুদ খামের চিথিগুলো
জনতার কাছে এলেই
আপন আপন প্রিয় জনের কাছে পৌছে গেলেই
নতুন এক যুগ আসত।
বস্তি পার্ক কলোনি নগরী শহর বন্দর
গ্রাম গঞ্জ হাট বাজার মাঠের মানুষ জেগে উঠত।
সফল হত ত্রিশলক্ষ টগবগে তাজা প্রাণ
তিনলকক্ষ মা বোনের ইজ্জত দান
অগণিত মানুষের বুক ফাটা আর্তনাদ-হাহাকার।
আর
ঘুচে যেত তোমার আমার মাঝে্র যত ব্যবধান।
শুধু সে চিঠিগুলি--