চরনাচনা গ্রামের ধূলি থেকে উঠে এল মাহবুব
পাষাণে পাষাণ গড়ে ওঠা রাজধানী ধাকায়।
বড় মাপের মানুষ হবে বলে
সুদূর তাকায়
স্বপ্নরা আকাশ ছুঁয়ে যায়
কখনো মেঘ কখনো তারা, চাঁদ ছাড়ায়।


দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ, আইনের ছাত্র
হলের গৌরব মাহবুব-মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়
মুক্তির পাখা উড্ডীন!উড্ডীন!
চারপাশে স্বপ্ন সোনার হরিণ
হাতছানিতে ডাকে।


কিন্তু মাহবুব?
নিজেকে গড়তে চায় শুদ্ধ মানুষের চাকে।
অলীক আশ্বাস মিথ্যা প্রতারণা তাই
দু’হাতে ঠেলে দূরে রাখে।
অধ্যয়নের ফাঁকে ফাঁকে
অর্ধাহার-অনাহারী অসহায় জনের খবর লয়
আঁখি মোছে, কাঁদে বেদনা সমবেদনায়।
যতই দিন যায় দেশজুড়ে বাড়ে ধ্বংসস্তূপ
মাহবুব ভাবে কী করে দূর করা যায়?
জাতির এ ক্ষয়িষ্ণু অসুখ!


খোঁজতে খোঁজতে একদিন
নিজের পছন্দ মত পথ খুঁজে পায়
তা নিয়ে রাজপথে নামে, শুরু করে দূরন্ত মিছিল।
ঘরহারা পথহারা সবহারা অগণিত মানুষ
মিছিলে এসে যোগ হয়।
অন্নবস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা জীবনের নিশ্চয়তার দাবীতে
সারা দেশ জাগায়, কড়া নাড়ে স্বৈরাচারীর আখড়ায়।


আর যায় কোথায়?
শকুনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মাহবুবের উপর এসে পড়ে।
অল্পদিনেই মাহবুব খবর শিরোনাম হয়
আততায়ীর গুলিতে মেধাবী ছাত্র খুন
আপন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।
থেমে যায় বিদ্রোহ এক জ্বলন্ত আগুন
মিছিল ফাগুন।
তৃপ্ত শকুন
অন্তরে-কন্দরে–বন্দরে।


এদিকে মাহবুবের জন্ম দুখিনি মা
‘বাব’ বলে বুক ফাটা এক চিৎকারে
ফিরে যায় আর না ফেরার সেই দেশে
সকল বেদনারে রেখে যায় এপারে।
আর মাহবুবের জনম দুঃখী কৃষক পিতা আহারে!
আজো বেঁচে আছে, বাচা বলে না তাহারে।
ছাত্র-জনতা সোচ্চার হয়, বিচারের দাবী তোলে
ঘুমন্ত প্রশাসনের দুয়ারের কাড়া নাড়ে
খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়।


কিন্তু প্রশাসন?
মিথ্যা আশ্বাসে জনতাকে ভুলিয়ে রাখে কিছু দিন।
দিনে দিনে খুনের আলামত বিলীন
তারপর ধোয়া ওঠায়-
আমরা তো চিনি না খুনীদেরে
কী করে আনি বল তাদেরে ফাঁসির কাঠগড়ায়?
জনতা ব্যর্থমনোরথে ফিরে আসে
বিচারের দাবী গুমরে কাঁদে বাতাসে-ধূলায়।
খুনীরা বহাল তবিয়তে অট্টহাসে
উল্লসিত নতুন রক্ত নেশায়।


হায় রে আমার দেশের আদালতপাড়া আর প্রশাসন!
আমি, আমার তিন বছরের অবোধ মেয়ে রহিমন
সরল জনতা আর আমার পোষা কুকুর লায়্ন
তার চেয়েও অধম!
আমরা যদিও চিনি খুনীদেরে
চিনি তাদের পোশাক আশাক, চাল চলন
নেশার ধরণ। চিনে না শুধু তারা
যাদের নোংরা হাতে আটকে আছে ন্যায়ের দণ্ড ভার
তাদের আঁতাত ও মদদে বিচার হল না
কোন মাহবুব হত্যার।