১৯৮৩, সামরিক দুঃশাসনের ছত্রছায়
ফিলিপাইনের বিধান সভার নির্বাচন।
দেশচ্যূত দেশপ্রেমিক বেনিগনো একুইনো
সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার-
দেশ ও জাতির কথা ভাবে, আর কাঁদে।
এক দিন সিদ্ধান্ত নেয় দৃঢ় মনে
দেশের হেন দুঃশাসন রোখার এ সুবর্ণ ক্ষনে
যে কোনমূল্যে তাঁর ফিরে যেতে হবে দেশে
আর নির্বাচনে করতে হবে অংশ গ্রহণ।


যে ভাবনা সে মত শুরু করে কাজ
পত্র-পত্রিকা খবরের কাগজে আসে বিস্তারিত প্রকাশ
দেশের জনগণ তাঁকে ফিরে পাওয়ার জন্য জেগে ওঠে
দাবী তোলে তাঁদের প্রিয় নেতাকে ফিরিয়ে আনার।
জনতার সে একতাবদ্ধ দাবী মানতে বাধ্য হয়
স্বৈরাচারী দুরচারী মার্কোস সরকার।


২১ আগস্ট, টেক্সাস বিমানবন্দর রানওয়ে
ফিলিপাইনের পথে ঊড়াল দিল বেনিগনোকে বহনকারী বিমান।
জানালার কাঁচে হাত নেড়ে বিদায় জানাল বেনিগনো
বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর কিছু বন্ধু-বান্ধব আর  
এতদিনের আশ্রয়দাতা প্রবাস আর প্রবাসের মাটিকে।


পিছু ফেলে মেঘ কুয়াসা নীল আকাশ
হিম শীতল হালকা বাতাস, পেজা পেজা তুলার পাহাড়
আর ভাবনার কতনা রাজ্য কতনা সমুদ্র অপার।
বেনিগনো দেখে সম্মুখে উজ্জলতার নারিকেল সুপারী
জলপাই আঙুর বেদানা নাসপাতি গাছের সারি
ফুল ফল সাজানো বাগান সোনার ফসল ভরা মাঠ
মায়ার ছায়া নিয়ে জড়িয়ে থাকা ফিলিপাইন নামক
নৈসর্গিক দ্বীপপুঞ্জের এক দেশ।
তর সয়না যেন অবুঝ পরাণে আর
কখন জড়িয়ে নিবে বুকে মা বলে সেই তাঁর মাকে।


আরো আকাশ দিগন্ত সামিয়ানা মেঘের ভীড়
অজানা রাজ্য নদীর মোহনা সমুদ্র তীর
পাড়ি দিয়ে এগিয়ে যায় মানবহনকারী ঈগল
তারপর কোন এক দীঘল সময় পর
সেই চিরচেনা দেশ, ম্যানিলা নামক শহর
তা দিয়ে দেখে ভালবাসায় শান্ত করে গতি
তারপর এক সময় ঝাপ দিয়ে নামে মাটিতে।
ঈগল থামে, আর বেনিগনো কেঁদে ওঠে।


সর্গের আমেজে সিঁড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায় বেনিগনো
আহ! ঊর্ধ্বে নির্মল আকাশ, দূরে সাদা মেঘের ভেলা
নিম্নে প্রাণ খোলা মাটি, ঘিরে থাকা বিমুগ্ধ বাতাস
শ্রদ্ধায় মাথা নীচু করে দেশের প্রতি।
সে জানে না এর ভিতরেও অতপেতে আছে
মার্কোস এ্যামিলদা মার্কোসের পালিত কিছু শূয়র অতি
যারা রক্ত আর দেশপ্রেমিকের লাশে করে উদরপূর্তি।


হঠাৎ দ্রুম! দ্রুম! শব্দ
ছোট্ট কয়েকটি ধাতবপাত্র
বেনিগনোর বুক চিরে ওপাশে বেড়িয়ে যায়
বেনিগনো ফিনকি দিয়ে ওঠে, সিঁড়িতেই লুটায়।
গল গলানো রক্ত সিঁড়ি বেয়ে মাটিতে নেমে আসে
এক বিবেকের অধ্যায় ফুরায়।
আর দেশ লেখায়-
ইতিহাসে ঘৃণার সাথে দেউলিয়াত্বের নাম।
যেমন আমরা লিখিয়েছিলাম
পঁচাত্তরে একাশিতে দুইবার।