ট্রেন আসবে ট্রেন, বিজয়ের নিশান উড়িয়ে স্বপ্নের ট্রেন
টেকনাফ হতে তেতুলিয়া, সুন্দরবন হতে জৈন্তাপুর
দীঘল পথ ধরে একদিন আসবে কমরেডের ট্রেন।
ভোরের কুয়াশা রৌদ্র কুমকুম, ঘুমন্ত মানুষের ঘুম
ফুল পাখি আঁখি চুম রাঙানো ট্রেন।


পাহাড় পর্বত টিলা, চা বাগান, শালবন, সবুজ গাছের সারি
গেওড়া কেওড়া মেহগনি আম জাম নারিকেল সুপারী
মগ মুরং চাকমা শাওতাল খাসিয়া টিপরাদের ঘর
হাওড় বাওড় ধানক্ষেত ফসল প্রান্তর
কিষাণ কিষাণী কামার কুমার তাঁতির গ্রাম
শহর বন্দর বস্তী মসজিদ মন্দির লাইটপোস্ট ল্যাম্প
ছুঁয়ে ছুঁয়ে একে একে এঁকে বেঁকে আসবে সে ট্রেন।


ইঞ্জিন বগিতে কমরেড, পাশে বসা বঙ্গবন্ধু ভাসানী
পিছনে ঈশা খাঁ, মীর মদন, মোহন লাল, তিতুমীর
হাজী শরীয়তউল্লাহ, রফিক, শফিক, বরকত, সালাম
আরো কত নাম, আছে বীরশ্রেষ্ঠরাও।
ত্রিশ লক্ষ শহীদ আত্মা উপচে পড়া মুখ সারা ট্রেন ভর্তি।
ট্রেন আসবে ট্রেন, ঝমঝম ঠকঠক কমরেডের ট্রেন
শহর-বন্দর-গ্রাম-গঞ্জ-দূর থেকে দূর
নেচে উঠবে জেগে উঠবে শব্দের ঘুঙুর
কমরেড আসছে কমরেড! আমাদের প্রিয় কমরেড
নারী-পুরুষ শিশু কিশোর আবাল বৃদ্ধা বনিতা
সবার কণ্ঠে একই সুর-
কমরেড আসছে কমরেড! আমাদের প্রিয় কমরেড
যত অত্যাচার-অনাচার আঁধার কুয়াসা বিভেদ
এবার হবে দূর।


সেই কমরেড আসবে, তাঁর ট্রেন থামবে সে আশায়
কত যাত্রী, হকা্র, কর্মচারী, কুলি-মজুর ভিখারী
প্লাটফর্ম, দূর আরো দূর, আরো দূরের পথ চায়
কখন আসবে? কখন আসবে সেই ট্রেন?
অপেক্ষমান প্লাটফর্ম যাত্রীর গা ঘেঁষে দাঁড়াবে এসে
হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেবে হাত শিশুর বুক মুখ শরীর
তারপর নামতেই প্লাটফর্ম জনতার ভীড়
আলিঙ্গনে আলিঙ্গনে এক ঈদ দৃশ্য
আলাপনে আপ্যায়নে সুখ নিভির।
কেহবা দেখার আনন্দেই
দূর থেকেই আনন্দাশ্রুতে অধীর।


সেই কমরেড কখন আসবে? সারা গাঁয়ের মানুষ
পথে আঙিনায়, হাট ঘেঁষা দীঘল পথ চায়
হাজার ব্যস্ততা কাজের মাঝেও
কান পেতে রাখে হুইসেল শোনার আশায়
শিশুরাও কম নয়; লাইনের কাইমে কান রেখে
বুঝে নিতে চায় তার আগমন আগাম ধ্বনি।


আর আমি? যখনি
যেটুকু সময় পাই কাজের ফাঁকে
গল্প কবিতা স্বপ্ন কল্পনার ক্যানভাসে
সেই কমরেডের হাজার মুখোচ্ছবি
তাঁর বিজয় পতাকা  পতপত ওড়ানো বাতাসে
তাঁর ট্রেনের ধোয়া চিমনি চলার গতি শব্দধ্বনি
বুকের ভিতরে সুখের আখরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যতনে সাজাই।