প্রায় চল্লিশটি বছর যাবৎ আমরা অসহায় মানুষেরা দেশের দুরাবস্থা দেখতে দেখতে কেমন যেন ক্ষেপে গেছি। আর  সে অসহায়ত্বের খেদোক্তি মাঝে মাঝে নানা কাজে বেড়িয়ে আসে। তার একটি আজকে কবিতাও। তাই পাঠক/ কবিদের কাছে পূর্ব ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি , মনপুত না হলে কিংবা মতানৈক্য থাকলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন। আর সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এ কামনা করছি।
----------------------------------------------
জাগো হে সাথীদল অস্ত্র তোল
রাত্রীর দ্বিপ্রহর হয়েছে গেছে পার
চাঁদ ঠেকেছে দূরের বনে- গাঁয়ের ওপার।
কাঁচা আঁধার ওতপেতে আছে দূরে
ভাব টইটুম্বর চারপাশ রাতের বাতাস
জলকন্যা মধুমতি উজান ফেরে
জোয়ার জলের ঘুঙ্গুরে গোপনে কূল উছলায়।
এপার ওপার যতদূর চোখ যায়
দূরের বাঁক, বাঁকা গ্রাম, উঁচু মিনার, শিরিষ বন
সাদা মেঘ, ধ্রুবতারা, আকাশের মৌন মন
নেশার ঘুম নির্বাক।


গাঁয়ের হাট ফসলের মাঠ মেঠো পথ নদী তট দূরের বট
আসন্ন আঁধার জড়িয়ে নিতে শরীর করে প্রস্তুত।
আরো অদ্ভুত! দেখো রাতের পাখিরা নামে শিকারের খোঁজে
শিকার যে এখন হেয়ালী ঘুমে নিশ্চুপ ওরাও বোঝে।
দেখো কিছু পাখি উড়ে যেতে যেতে
দূর বন, নিথর গহন, ঘুমের গাঁয়
আমাদেরে কী যেন বলে যায়-
খালের খবর, বিলের খবর, ঝিলের খবর
বনের খবর, যুগের খবর ইশারায়
ধীর পাখনায় রাত্রীর আকাশে এঁকে যায়
ভোরের আগাম খবর।
এই তো সময়
যারা শত্রু শিবিরে আঘাত হানতে চায়
লড়তে চায়- প্রয়োজনে মরতে চায়
বঞ্চিত জনতার বিজয় দেখার জন্য।


তাহলে আর দেরি কেনো? উঠে পড়ো!
খুব তাড়াতাড়ি নিজেদেরে প্রস্তুর করো!
সাথে যার যার ইষ্টনাম জপো!
দেশের হেন পরিস্থিতি থেকে জাতিকে উদ্ধারে
মাতৃভুমির মাটিতে বিছাও হৃদয়ের জায়নামাজ
দু’রাকাত নামাজ পড়ে নেও।
হয়তো এটাই জীবনের শেষ নামাজ।
তারপর আবার ইষ্টনামে অস্ত্র উঠাও
গোলাবারুদ সরঞ্জাম তোল কাঁধে
তারপর এগিয়ে চলো—!
চেয়ে দ্যাখো ওই সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়ে যায়
কাঁচা আঁধার ভাসা মেঘ বনের ছায়া ডুবন্ত চাঁদে।


খুব সাবধানে দিতে হবে পাড়ি যেতে হবে ওপার।
তারপর ওই নদীর খাড়ি বন্দরের জেডি উঁচু বাড়ি
আরতদারের আরত গদিঘর ট্রাক লড়ি
ঠেলাগাড়ি গরুরগাড়ি টমটম
লাইটপোষ্ট ল্যাম্প পাড় হতে হবে খুব সাবধানে
দেখে শুনে ভাল করে ডানে বামে
গাছের আঁধার দালানের ছায়া চৌকিদারের টং।
যদি দু’একটা কুকুর হঠাৎ ওঠে খেঁদে
হাত নেড়ে ইশারায় বলবে যে,
আমরা দেশের সৈনিক নেমেছি দেশের কাজে
তোমার ভয় নেই, তুমি শুয়ে থাকো
সুখে আঁখি বুজে।


তারপর নীচু হয়ে এগিয়ে গিয়ে ঘুমন্ত শান্ত্রীর চৌকি সীমায়
প্রমোদ শেষে মৃত্যু প্রায় রাজা-রাণীর হায়েনার খিমায়
খুব কাছাকাছি গিয়ে দ্রুত তৈরী আমাদের এ্যাম্বুশ
ওদের না পেতেই কোন রকম চৈতন্য-হুশ
আমাদের চতুর্মুখী আঘাত যারে বলে মৃত্যু বজ্রপাত
রাইফেল, রকেট, মর্টার, গ্রেনেট, বোম দ্রুম! দ্রুম! দ্রুম!
কামানের গোলায় লাঞ্চারের দোলায় মুহূর্তে নিপাত
দিশেহারা দিকহারা নেশার ঘুমে ঘুমন্ত প্লাটুন
রক্তের ফিনকি! আগুন আর আগুন!
জনতার ভাঙতেই ঘুম
শোনবে সৈরাচারী রাজবাড়ির করুণ চিৎকার
আকাশে বাতাসে মৃত্যুর অট্টহাসি। লালে লাল দুনিয়ার
বঞ্চিত মানুষের মুক্তিসেনার আগুয়ানি বিজয় ধ্বনি।


শেষ হয়ে এলে সফল প্রায় ‘বিজয় অপারেশন’র কাজ
যদি দু’ একজনের পাওয়া যায় বেঁচে থাকার আভাস
ওদেরে দিও নাক পালাবার কোনই অবকাশ।
কষে বেঁধে দুই হাত পাও
হোক সে রাজা রানই তাও
বাঁশের লাটিতে ঝুলিয়ে কাঁধে নিয়ে যাও
জনতার মঞ্চের কাছে; যেথা ভোরের আলো হবে সমাহার
জনতার আদলতে প্রকাশ্য দিবালোকে কমিনাদের কর বিচার।


তারপর প্রকৃত মুক্ত স্বাধীন স্বদেশ, স্বাধীন আমরাও
অর্ধাহার- অনাহারে মরবে না আর কেহ
গুম-খুন মিথ্যে হয়রানী হবে আর মানুষ
ধর্ষিতা নির্যাতিতা হবে না নারী।
আর মরতে যদি হয়!
নিত্য মরার চেয়ে একদিনেই যাবো মরি।
আর দেরি নয়, জাগো হে!
নিশিথ রাত্রীর যাত্রী ভাগ্যহতের কাণ্ডারি!