উৎসর্গে :-
আমার আজকের এ অগোছালো কবিতাখানি উৎসর্গের ভাঙা ঝাঁপিতে যাঁদেরকে শ্রদ্ধায় মাথা পেতে নিলাম তাঁরা অধিকাংশ সময়ই তাঁদের মহামূল্যবান সময় ও গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে আমি অকবিকে কবিতে রূপান্তরের ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ সময় ও বিদ্যার অভাবে আমি তার প্রায় উল্টো। এমন কি আসরে ভীষণ অনিয়মিতও বটে। যদিও আমার ঠুনকো কলমে সেসব মহান কবি ও পাঠকদের নাম উল্লেখ্য-না উল্লেখ্যে তাঁদের তেমন কিছুই আসে যায় না। তবুও আমার আত্মপ্রশান্তি লাভে সে অনধিকার চর্চায় হাত দিলাম। তাঁরা হলেনঃ (১) বাংল কবিতা আসেরের বিশেষ কবি সুবীর কাস্মির পেরেরা, অরুণ কারফা, সরকার মুনীর, কবীর হুমায়ূন, মোহাম্মাদ আজিজুল হক রাসেল, মহিউদ্দিন হেলাল, খান, এ বি এম সাব্বির, মহারাজ, স্বপ্নবাজ, নাইবা গেল জানা, সাইদুর রহমান, পলাশ, মোঃ আরিফুর রহমান (ডিজিটাল কবি), ইনসিগনিয়া (অভি), রুম্পা শিমুল, জোহরা উম্মে হাসান, ফারহানা শারমীন, রোদের ছায়া, নাজমুন নাহার, তানিয়া রহমান, প্রণব মজুমদার, ইব্রাহীম রাসেল, আজাদ আলম, মাসউদুর রহমান খান, মোঃ আনোয়ার সাদাত পাটোয়ারী, মীর শওকত, বিভূতি দাস, মোঃ মজিবুর রহমান, ফখরুল ইসলাম, রুচিরা, পুসং, ইন্দ্রের চন্দ্র, দীপঙ্কর, অবিনশ্বর মুখার্জী, পরিতোষ ভৌমিক, সৈকত মান্না, প্লক রহমান, সালমান মাহফুজ, দেবাশীস সাধু, জবলুল হক, রাজু আহমেদ(২) বকলম ডট কম ও আমার ব্লগের বিশেষ লেখক কবি সোলাইমান খান লোকনাথী, রিয়াজুল মবিন রাতুল প্রতীতি সিনিয়র ভাই, বাজ্জাত, ফার্মার, সত্য সহায়গুরুজী এবং অতিথিসহ অসওতিথ লেখক, কবি, পাথক-পাঠিকা আর (৩) ফেইজবুকের জনাব মুরাদ হোসাইন মারুফ, ময়েদ সাজ্জাত, মতিউর রহমান, আবুল বাশার, আফতাবউদ্দিন বেপারী, মঞ্জুর আহমেদ, লোপা রায়, এবং ইউনুস আলী প্রমুখসহ আরো অনেককেই। অপরদিকে এমনও অনেকে আছেন যাঁদের আমি ভালবালেও আমার প্রতি তাঁদের নজর দেয়ার মোটেও সময় নেই, তাঁদেরকেও শীরের এ ভাঙা ঝাঁপিতে স্বশ্রদ্ধায় তুলে নিলাম। আমার ছন্দহীন অর্থবিহীন দীর্ঘ কবিতা এবং এহেন অপ্রয়াসে যদি কারো মনোতুষ্টির বিপরীত কারণ হয় তবে তাঁর কাছেও অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিলাম।


------------------------------------------
চলোনা এখান থেকে দূর! আরো দূর কোন পল্লী গাঁয়।
যেথা সবুজ শ্যামল গাছের ছায়া মায়া জড়ানো লতায়
স্পন্দিত শিহরণ ভৌরবী গুঞ্জন গানের আভাস
পাখি কাকলি ডানাঝাড়া শব্দ ফুলের সুবাস
এক সাথে আসে শরীর জুড়ানো বুনো বাতাসে।


কৃষকের গ্রাম কামার কুমার জেলে মজুর শিক্ষকের বাড়ি
এখানে পুকুর ওখানে দীঘি মসজিদ মন্দির পুরনো রথ
দেবদারু ঝাউ শাল সেগুন কড়াই নারিকেল সুপারী
জাম জামরুল জারুল শিমুল ঝরা পথ।
দোয়েল কোয়েল ঘুঘুর ডাক বনাস্পতির ঘুঙুর
হাফরের শব্দ, তাঁতির তাঁত পেটানো সুর
কলসি জোড়ানো আওয়াজ ঢেঁকি্র ধানবানা
বাতাসে ধান, মাটি ও হলদির গন্ধ
হৃদয়ের কাছে সে বড় চেনা।
সুখে দুঃখে এক ছাঁচে এক মাটির মানুষ সবে
এক হাটে এক ঘাটে প্রতিদিন হয় দেখা
কেহ ভাই কেহ বন্ধু কেহবা কারো সখা
সহজ মূল্যে হয় হৃদয়ের বেচা কেনা।


কৃষক মজুর রিক্সাচালক শিক্ষকের ছেলে
এক সাথে পাঠশালে যায় মিলে মিশে খেলে
ঘাস কাটে যমজ ভাইয়ের মত।
কিষাণী-কিশোরী দল বেঁধে ফেরে প্রায়শঃ
দীঘির ঘাটে, নদীর জলে
ধানের গন্ধ মাখা দেহে
সাবান মাখে, গল্প করে, দুঃখ ভোলে
ইচ্ছে মত শীতল ছোঁয়া লয়
জলের স্নেহে পূর্ণ করে ক্লান্তির ক্ষয়।
ভরা ঘট, ভেজা শরীর, লাজুক আঁখি গাঁয়ের পথে
ঘরে ফেরে মেঘের মোড়কে ঢাকা চাঁদের মত
বঙ্গ নারী-গাঁয়ের বধূ-কিশোরী-লক্ষী ধরিত্রীর।
কৃষক ব্যস্ত স্বপ্নের ফসল ফলাতে
মাঠ ও মাটি স্বপ্নের অধীর।


অথবা উল্টো চিত্র অনেকের জানা পৃথিবীর।
উপুর হয়ে শুয়ে আছে বেদনার্ত শূন্য মাঠ
সার বীজ লোন সেঁচের অভাবে।
অথবা মহাজনের গতবারের ঋণের দায়
খোয়া গেছে হালের বলদ, চাষের জমি
ভিটেমাটি-গোরস্তানের জায়গাটুকু সেও যে।
হাত ওঠেনি কাস্তে কোদাল লাঙলে নায়
বড় অসহায় এখানের সহজ সরল মানুষগুলো।
দুখিনী নারী যারা তাঁদেরে লয় না কেউ কামে
‘এনজিও’ ‘কাবিখা’ হাজারো নামে
হাজার প্রতিষ্ঠানে চলে শুধু শুভঙ্করের ফাঁকি।
এসব শুধু আমলা ও নেতাদের পুকুরচুরির সহজ খাত
বরাদ্দ হজম; মেরামত হয় না কোন দিন
কোন ভাঙা পুল, বেহাল রাস্তা, কালবার্ড, বেড়িবাধ
খাল খননের টাকা পুরোটাই হয় মাটি।
ও সব খবর এখানে না হয় রাখি।
দেখবে যদিও দু’ এক জায়গায় হয়েছে কিছু চাষ
বৃষ্টি-বিদ্যুৎ-সার ও সেঁচের অভাবে তাও মৃত প্রায়
এমনকি অতি খরায় পুড়ে গেছে মাঠের ঘাস।
ক্ষুধা মহামারি মঙ্গা আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে বার মাস
কৃষক পড়ে আছে বিছানায় বিনাঔষধে হয়তো যাবে মারা
কিষাণীর পড়নে ছেঁড়া-জীর্ণ বাস
হাভাতে হাহাকারে অনেকেই হয়েছে গ্রাম ছাড়া।


অথবা রাজনৈতিক কোন্দলে প্রতিপক্ষের নেতার ইশারায়
ঢেলে দেয়া বিষে মারা গেছে কারো হালের বলদ
দুধের গাভী, ফার্মের মুরগী, পুকুরের মাছ
আঁধারে দেখেছে বতসভিটায় আগুন
অথবা কেটে ফেলা হয়েছে লাগানো শিশু গাছ।
চলো না সেথায় আজ! আগে করি সেঁচের ব্যবস্থা
ফসলের চারাগুলো যাতে বাঁচে!
তারপর সেবা যতন মেধা ও মনন দিয়ে
দাঁড়াই সে সব অসহায় মানুষের পাশে
যারা এতদিন মহামারি-মঙ্গা-যাতনায় ডুবে আছে
যারা বাঁচলেই সত্যিকার দেশ বাঁচে, জাতি বাঁচে।


তারপর শাসত ভালবাসায় নদী ও ফসলের ঢেউ দেখি
মাটি মানুষ সবুজ ছোঁয়া আনন্দ বাতাস
ভোরের সোনা রৌদ্র ফসলের খিল খিল হাসি
আলের পাশে পিতৃপুরুষের পুরনো ভিটার কাছে
একত্রে দাঁড়িয়ে সুখে বুক ভরে গ্রহণ করি।
চলো না! তুমিও চলো!