আমাদের পাশের বাসার কাজের মেয়ে দুঃখিনী রহিমা
বাবা মারা গেছেন বলে তাঁদের  আর কেহ রহিল না।
মা এসে একদিন দিয়ে গেছেন এ মেম-সাহেবদের বাসায়
পেট ভরে ভাত আর বড় হলে বিয়ে দেবে্ন সে আশায়।
ঘরে ফেরা পথে এক ট্রাক দুর্ঘটনায় তিনিও গেলেন মরা
তারপর থেকে রহিমা সংসারে একেবারে আপনজন ছাড়া।


এতটুকুন মেয়ে এক পেট আধা পেট খেয়ে সারা বেলা
থালা বাসন ধোয়, কাপড় কাঁচে, ঘর মোছে, নিরালা
রাজ্যের ভাণ্ড বাটি আলনা আলমারি শোকেস সাঁজায়।
চায়ের পানি দুধ গরম করে, তরকারীর খোসা ছাড়ায়
আটা ছানে, দোকানীর বাকীর খাতায় লিখে এটা সেটা
চা চিনি ডিম দুধ সিগারেট আনে, শতবার নামা ওঠা
চারতলার সিঁড়ি বেয়ে উপর-নীচে। তবু কি ফর্দ থামে?
ছাঁদ ছিটকানো ছেলেমেয়ের খেলার বল ও-ই তুলে আনে।
ওর স্বপ্ন সাধ ক্লান্তি দীর্ঘশ্বাস বোঝার কেউ নেই এখানে
যে এতটুকু স্নেহের আঁচল বুলায় ওর কচি মুখের ঘামে।


উপর্যুপরি শোনে ভৎসনা, প্র্তিদিন কত না মার খায়
নির্মমতার হাজারো সাক্ষী জেগে আছে তার কচি গায়।
‘মা’ বলে, ‘লক্ষী’ বলে আদরে জড়িয়ে বুকে টেনে লয়
এমন দরদী শহুরে সাহেব বেগমে কখনো কি কেউ হয়?
রাত্রীর মাঝ অবধি সে ছোট্ট শরীরেই চলে ঘানী টানা
শুতে গেল পুরনো কাঁথা বালিশ যা হয়েছিল সাথে আনা
সেই গ্রাম থেকে, তাই পেতে শুয়ে নিশার ঘু্মে ঘুম যায়
আল্লাহর কাছে নালিশ করে এমন সময় তার কোথায়?


সাহেব বেগম ছেলেমেয়ে পার্কে রেস্তরাঁয় বিনোদনে গেলে
ওর রেখে যায় তালা দিয়ে ঘর গোছানোর ফর্দে ঢেলে।
ওর বয়সী মনিবের ছেলে মেয়ে পার্কের বেঞ্চিতে যখন
ফার্স্টফুট খায়, ও তখন দেখে জানালা ওপারের গগন
উড়ে যাওয়া মেঘ, নীরব দাঁড়নো টিএন্ডটির টাওয়ার।
হারানো বাবা মার মুখ ফেলে আসা সুখ গ্রামখানি তার
ভাগ্যের নির্মম ঘূর্ণন চাকায় কোথায় ছিটকে পড়েছে সে!
বিধি এত নিঠুর তারপরেও তাঁকে ‘দয়াময়’ বলেছে কে?
অবোধ রহিমার এ সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর দিবে কে?


এমনি করেই দিনের পর দিন এগিয়ে চলছে এতিম রহিমার
কে জানে আদৌ মুক্তি হবে কি না, এ ঘানী থেকে তার?
পাবে কি না ফিরে স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক অধিকার?
আমি সে আশে বুক বেঁধে আছি নবীনদের যাত্রাপথের পার।