দেন মোহরের বিবাদ মিটলো কথা করে কাটাকাটি
দেনা পাওনা কত আনা-পাই ব্যাভার গয়না-গাঁটি
বিয়ের পাটিতে বসেছে কনে লম্বা ঘোমটা দিয়ে
সখীর দলে ঘিরেছে পাশে নানী-দাদী সাথে নিয়ে।


বুক ধুরুধুরু পরাণ কাঁপছে লাজেতে ডুবেছে বাণী
কিষাণ কন্যা আজকে নিমেষে হবে কিষাণ-রানি
উকিল আসলো পয়গাম নিয়ে জন পাঁচ সাথে তার
হাতে দিয়ে পান জিজ্ঞাসিল তারে সম্মতি জানবার।


বরের বন্ধু আসলো সাথে, দাদী কয় তারে ডাকি
নগদ কিছু না ছাড়লে মুখে খালি হাত উঠে নাকি!
নগদ নিয়ে তো এসেছি দাদী, বাকীতো রাখি নাই
নাতনীর হাতে দিতেছি তুলে জোয়ান বন্ধু-ভাই।


চাপাহাসি-ঝড় বয়ে গেল সব সখীদের দলেবলে
দাদী বলে 'বাছা কথা জানো ঢের, কথায় কি আর চলে?
পকেট ঘেঁটে শেষে বরের বন্ধু মুঠিতে চেপে ধরে
কনেরে দিয়েছে নগদ সেলামী অনেক দম্ভভরে।


উকিল বলে ত্বরা করো মাগো দেরী করা না সয়
ওই দিকে আছেন সবাই বসে, রাত্রির যে হয় হয়
শোকর গুজারে দরবারে খোদার মত দিয়েছে কনে
সকলে মিলে দোয়া করতে হাত তোল এই ক্ষণে।


মৌলভী পড়লো আরজ-দোয়া, আমিন বললো সবে
দাড়ি দিয়ে তা' মৌলভী বলেন "এইবার উঠি তবে
দাওয়াত রয়েছে আরো দুই বাড়ি, সময় বড় কম"
টুপিখানা ঝেড়ে চটি জোড়া পায়ে বাড়ায় সে কদম।


বাবার চোখের পানি ছল ছল করতে কন্যাদান
মা'র কন্ঠে স্বর নাই কোন পরাণে বাঁধলো পাষাণ
বড় দুই বোনে বুকে নেয় টেনে কেঁদে ভাসায় চোখ
খুশিরে ছেপে বড় হয় আজ বোন বিদায়ের শোক।


সোরগোল সব হৈ হৈ রব মিশলো কাঁদন রোলে
মায়ে-মেয়ে কাঁদে জড়িয়ে ধরে একে অন্যের গলে
বিদায় দিতে মায়ের পরাণ আজকে না আর সরে
নয়নের জল উছল হয়ে নয়নেরে ঘিরে ধরে।


কনের সাথে দাদীও চলে পানের কৌটা হাতে
ছোট বোনটার খুশি ধরেনা'ক চলেছে বরের সাথে
কিষাণ কন্যা মায়া ডোরে বেঁধে নতুনের সাথী করে
বিগত দিন স্মৃতি করে সাথে চলেছে স্বামীর ঘরে।।