দুয়ার খোলা গগন হাসিতেছে বুকে লয়ে চাঁদ-তারা
খিড়কী ধরিয়া দিতেছে ঝাঁকুনি জোছনা লক্ষ্মীছাড়া
খিড়কীর সেই আল-পথ ধরি দৃষ্টি হারালো দূরে
গাঁয়ের সেই মেটোপথ-ঘাঁট, আঙ্গিনা আসিছে ঘুরে
সেই পথ-ধুলি, বাঁশবন ছায়া, সেই নদীপাড়-জল
দখিনের বাগ, ঝাট-মুছে সাফ বাতাবী গাছের তল
তরুলতা যতো আনত হইয়া শাখা পাতা ফুল নাড়ি
জিজ্ঞাসে আসি 'তোরে যে দেখিনা কতটা জনম ধরি'
লেঁজুড় দোলায় সাদা বাছুরটা কপালেতে টিকি আঁকা
আদরে আদরে রাখে চক্ষু মুদিয়া ঘাড়টি করিয়া বাঁকা
বোনটি আসিয়া চুপি চুপি কয় চলোনা নদীর ঘাঁটে
কাটিবো সাঁতার, বকিবেনা মায়ে, বাপ জান গেছে হাঁটে
ঘাঁটে বাঁধা আছে সরু ডিঙ্গিখানা, দু'জনে তাহাতে চড়ে
দুলিয়া দুলিয়া ঢেউ তুলে কতো, ডিঙ্গি যায় জলে ভরে
এমনি হাজার স্মৃতির দোলায় হিয়া আজি টলমলে
ব্যথায় ব্যথায় ব্যথা হয় ভারী, আঁখি ঘোর হয় ফুলে।


কখন  আসিয়া তাহার স্বামী বসিলো তাহার কাছে
পায় নাই টের, সবেগে আঁচলে নয়নের ধারা মোছে
নব-বধূ তাহার মুখে নাই হাসি, নয়নে শাওন মাস
কাজল গলিয়া ভাসায় কপোল, ভাসায় বুকের বাস
চাঁদ মুখখানি দু'দিনেই তাহার ধরিয়াছে খুব মনে
হরিণী নয়ন শিকার হইয়া শিকারীরে টানে বনে
প্রদীপের আলো সমুখে আনিয়া চিবুক ধরিয়া তুলে
স্বামী তা'রি হাসে 'কি হইয়াছে, বলোতো আমায় খুলে'
বলা তো ছাই গলায় কেন যে ফুটিলো না কোন স্বর
কোথাকার কোন লাজের হাওয়া ছাঁইয়া গিয়াছে ঘর
পরশে স্বামীর নেশা ঘোরতর পলকে হারায় পণ
উড়ায় ধোঁয়া লহুর কণায়, ভুলায় মনি-কাঞ্চন
'বাড়ি যাইতে চাও, এমন কি আর!' মুছায়ে নয়ন জল
উষ্ণ শ্বাসের ঝোলায় ভরিয়া ঢালিলো সুখের ঢল
উজানেতে টানে পরাণ ধরিয়া শীতল স্রোতের রশি
প্রবল টানেতে বাঁধের দেয়াল পড়ি যায় খসি খসি
সুখের ধারায় ভাসিয়াছে শেষে সকল দুঃখের নুড়ি
সোহাগের রঙ গায়েতে মাখিয়া পবনে উড়ায় ঘুড়ি।।