আনাতোলিয়ার বুক বেয়ে এসে পারস্যের উদ্দেশ্যে
হায় ফোরাত, চলে যাস তুই কারবালা তীর ঘেঁষে
তোর বুকে জল করে থৈ থৈ, কল-কল করে স্বর
তারি সাথে সাথে টলমল করে মুসলিমের অন্তর
বুক ফাটে পিপাসায়....
তৃষ্ণার জল মেলেনি সেদিন তোর বুক থেকে হায়!
তোর কলকলে আজো যায় শোনা আর্ত কণ্ঠস্বর
এক ফোঁটা জল পায়নি মুখে শিশু আলী আসগর
তীরের ফলা ভেদ করে গলা জলের বদলে তার
নিষ্পাপ শিশু হয়েছে শহীদ নিদারুন অত্যাচার
ধূঁ ধূঁ কারবালা হু হু করে কাঁদে স্মরে সে ইতিহাস
আজো যায় পাওয়া মরুর ধুলাতে তাজা রক্তের বাস
ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন রবে বাতাস কেঁদে যায়
উল্লাসে করে মাতামাতি নিদয় ইয়াযীদ সম্প্রদায়।


হায় রে কারবালা....
দজলা-ফোরাতের জলে বুঝি তোর মিটেনি তৃষ্ণা জ্বালা
রক্তে রক্তে রঞ্জিত হলো ঊষর মরুর ধূলি...
ময়দানে আছে থরে থরে পড়ে নিথর দেহ গুলি
আকাশের গায়ে রক্তের ছোপ, সূর্য হয়েছে কালো
ভয়ে কাঁপে লোক দুনিয়া জুড়ে কেয়ামত বুঝি এলো
ডাকিছে ইমাম উচ্চস্বরে কে আছো আমার সাথী
শত্রুর করো মোকাবেলা আজ ফুলায়ে বুকের ছাতি
স্পন্দন কবে থেমে গেছে প্রিয় আলী আকবরের
বন্দী সকল শিশু ও নারীরা, প্রাণ গেছে কাশিমের
হয়েছে শহীদ আবুল ফজল, নবীর বংশধর
কেউ কোথা নাই ইমামের ডাকে দিতে কোন উত্তর
তরবারি হাতে একাকী ইমাম সত্য-ন্যায়ের বীর
লড়েন সবলে মুনাফেক দলে নিতে গর্দান-শির
শ্রান্ত দেহ, ক্লান্ত বাহু, বুক চৌচির তৃষ্ণা পিপাসায়
উমাইয়ার দল ঘিরেছে চৌদিক হিংস্র মত্ততায়
ওমর ইবনে সা'দ...
হানিল ত্রিফলা হোসেনে প্রথম মুনাফেক মুরতাদ
ধরাশায়ী হয় আঘাতের ঘায় নবীর নয়ন মনি
কারবালা মাটি লালে লাল হয়, কেঁদে উঠে অবনী
পাষাণ সীমার খণ্ডিত শির বর্শা ফলকে রেখে
কুফার পথে ছুটে যায় ধেয়ে ব্যথার কালিমা মেখে।


ফাতেমা মায়ের বুকের ধন...
ত্যাগের দীক্ষা দিয়ে গেল মনে, চোখেতে ক্রন্দন
কারবালার ওই বাতাসে বাতাসে, ফোরাত নদীর জলে
ইমাম হোসেনের ডাক ভেসে যায় আজো বুঝি পলে পলে
আকাশের গায়ে ধ্বনিত হয় 'কে আছ আমার সাথী'
সত্য-ন্যায়ের ঝাণ্ডা উড়াতে ফুলায়ে বুকের ছাতি।।