মুখে নাই ভাষা, ঠোঁটে হাসি, তাকিয়েছো মোর পানে
এ নিতুল হাসি লুকাই বলাে গো হৃদয়ের কোনখানে।
দু'টি কালো চোখ যেন দু'টি অলি বসিয়া পুষ্প বুকে
পাখা নাড়িতেছে, চুমিতেছে দল পলকে পরম সুখে,
হয়তো এখনি উড়িয়া যাইত চঞ্চল পাখা মেলি
কি জানি কোন টানে তাহারা গিয়েছে সে কথা ভুলি।


দু'টি চোখ যেন হৃদয় খাতায় লিখিছে কালির রেখা
পড়িতেছি শুধুই বিভোল হইয়া, মানে হয় নাই শেখা।
নয়নের তারা হইয়াছে বুঝিবা দূরের তারারা খসি
ক্লান্ত দেহ জুড়াইলো তাহারা নয়নে খানিক বসি,
অথবা তাহারা দু'টি হ্রদ যেন, ঘন কালো বন ঘেরা
কাজল লতায় ভরিয়াছে পাড় কনক পটল-চেরা।


কালো দুই ভুরু, উদিয়াছে যেন রামধনু পাশাপাশি
সাতরঙ ভুলে মাখিয়াছে কালি গগণ হইতে আসি।
ঝলঝল করি জ্বলিতেছে টিপ তাহারি মধ্যিখানে
প্রভাতী অরুণ উঠিয়াছে যেন রাঙা পূবেরি কোণে,
নিটোল কপােল যেন দীঘি-জল, নিথর শান্ত-তল
ছোঁয়া দিলে যেন উঠিবে দুলিয়া, করিতেছে টলমল।


গোধূলির আলো ডুবিছে আসিয়া কোমল তারি গালে
রক্তিম অাভা মোহতা লইয়া পড়িতেছে গলে গলে।
পত্র আড়ালে গোপনে ফুটিয়াছে রক্ত-রঙিণ জবা
যেন নাহি দেখে দখিনা মলয়, ঢাকিয়াছে পত্রসভা,
হেলিয়া-দুলিয়া শাখা তাহে রাখিতে চাহিছে শাসি
গােপনে তাহারে চুমিছে তবুও উতল হাওয়া আসি।
তেমনি যেন অধর কোলে লাজে বাঁধো রাঙা হাসি
খোদাই করিয়া দিয়াছে কে যেন উজাল ঈদের শশী।


কানে দুলে দুল, যেন বুনোফুল ফুটিল খানিক আগে
দুলিছে তাহারা কালো ভ্রমরীর পাখার হাওয়া লেগে।
যেন দুলিছে মধূপ আসিয়া, তারি হলদে কেশর ধরি
বৃন্তের বুকেতে বসায়ে হুল মধূ-রস করিতে চুরি,
গগণের নীলে জমিয়াছে মেঘ, ও মেঘ হইতে ছাঁকি
নিয়াছিলে বুঝি সবটুকু কালি কেশেতে লইতে মাখি।
রঙ-হারা সেই তুলো-মেঘ দিয়া গাঁথিয়া নতুন হার
চাহিছে হিয়া পরাইয়া দিতে সেই মেঘ-হার উপহার।।