(এক)


আষাঢ়ের ভরা বাদলার দিনে কিষাণী বধূর কোলে
এসেছিল সে যার কথা আজ বলিব তোমায় খুলে।
ভরা বাদলা, আকাশ কাঁদিছে নাই যেন অবসর
মেঘের ললাটে বিজলীরা জ্বলে ধরা কাঁপে থরথর,
শনশন বেগে ছুটিছে হাওয়া নিভিয়াছে সব আলো
টিনের চালাতে নাচিছে বৃষ্টি মুখেরে করিয়া কালো।
দুপুর বিকেল লুকায় নিজেরে মেঘেতে ঢাকিয়া মুখ
গোঙ্গানীর স্বরে কাঁদিছে দেয়া স্মরন করিয়া দুঃখ,
এমনি দিনেতে কিষাণীর কন্যা নতুন অতিথী হয়ে
ভরিল মায়ের স্নেহ ভরা কোল কচি দেহখানি লয়ে।
বাহির দাওয়ায় কিষাণ বসে শত আশা বুকে মাখে
কত আশা তার জুড়াবে নয়ন ছেলের মুখটি দেখে,
দু'টি মেয়ে তার সোনার পুতুল অালোয় ভরিছে ঘর
খোদার কাছে দু'হাত তুলিয়া মাগে সে ছেলের বর।
মানত্ করেছে পীরের মাঝারে উছিলায় যদি তার
মনের আশারে পূরণ করে পাক পরওয়ার দিগার,
এবারের ধান উঠিলে ঘরে সে ধান বেচিয়া তবে
দুই দশজন গরীব ডাকিয়া পেট পুরে খাওয়াইবে।
গুরুগুরুগুর আকাশ ডাকিছে হাওয়ায় লাগিছে জোর
শাখায় পাতায় হামাগুড়ি দিয়ে করিতেছে যেন সোর,
ছিন্ন পাতারা হল্ল্যা করিয়া ছুটিতেছে অবিরাম
মাচারে আঁকড়ে কুমড়োর লতা করিতেছে সংগ্রাম।
দাওয়ার কোণে দাঁড়িয়ে মোরগ কাঁপিতেছে হিমবায়ে
সাঁঝ-প্রদীপের কাঁপিছে শিখা হাওয়ার ঝাঁকুনি ঘায়ে,
কিষাণ বসিয়া জপিছে খোদারে ধুরুধুরু ভয় বুকে
ভিতরের ঘরে কান পেতে রাখে উৎসুখ চোখে মুখে।
সব আশা তার মাটিতে মিলায় চিৎকার দুলালীর
দীর্ঘশ্বাসের ঝাপটা দারুন বুকে হানে শূল-তীর,
বাদলার দিনে মেঘ-রানী এলো শীতলতা সাথে লয়ে
আলো অাঁধারে মিতালী পাতিয়া সুখ দুঃখ কাঁধে বয়ে।।