(দুই-ক)


নিত্য ঘুরিছে কালের চক্র বছরের কাঁধে চড়ে
কেমন করিয়া ষোলটি বছর হারায়ে গিয়াছে দূরে
কিষাণের সেই ছোট্ট মেয়েটি পেরিয়ে কিশোরী ক্ষণ
নব-বসন্তের খোলা মাঠময় করিতেছে বিচরণ
যৌবন- লতা অঙ্গ জড়ায়, দুলে উঠে নানা ছলে
মনের ধরনী তুলির আঁচড়ে রঙ্গীন করিয়া তোলে
কিশোরী তনুর বাঁকে বাঁকে জাগে পুলকের নয়া চর
নব কিরণ-লোকে নতুন মন্ত্রে যৌবন বাঁধিছে ঘর
পাঠশালা শেষে বিকালের বেলা সিঁথি তুলিয়া চুলে
আয়নায় দেখে কাজল আঁকিয়া নয়ন-উপল তলে
টুকটুকে লাল ঠোঁটেরে করিয়া কপাল সাজায়ে টিপে
লাজে ঢাকে মুখ, মনেরে পাঠায় অজানার সমীপে
আঁকিয়া-বাঁকিয়া মুখখানি দেখে, আয়না করিছে ভুল
দেখে যত খানি রূপ বুঝি তার তত খানি বিলকুল!
আয়না বলিছে মিছে কথা শুধু নহে সে রূপবতী
ছোট বোনের জিজ্ঞাসা করে 'মিছে ক'বি না একরতি
বল দেখি আমি সুন্দর কিনা, বেণী গেঁথে দিব তোরে
আলতা পরিয়ে দিবো পায়েতে অনেক নকশা করে'
"রোজ রোজ একই কথা কেন বুবু জিজ্ঞাসো বারেবার
এক কথা আর ক'বার বলিবো, বলিনি আগেও তার?"
ওই ঘর হতে মা ডাকে জোরে 'বেলা যে পরিয়া যায়,
কবে যাবি ঘাঁটে কলসী লইয়া, ঠেকেছি বিষম দায়।
সংসারে যতো কাজ পরে আছে, এত বড় ধারী মেয়ে
বিকাল গড়ালে এখনো আছে সাজাগুঁজি সব নিয়ে'
মায়ের যতো আজ রাগ ঝরে পরে সবটাই যে তার
কিষাণীর মেয়ে জড়ায় গায়েতে মমতার অলংকার
এমনি করেই করেছে বিদেয় সোহাগে শাসনে বেঁধে
বড় দুই মেয়ে স্বামীর ঘরেতে, মা'র মন উঠে কেঁদে
দু'হাতে দু'গাছি বেলোয়াড়ি চুড়ি ঝনঝন করে বাজে
হনহন করে চলে মেয়ে ঘাঁটে জল উঠানোর কাজে
বুকের ওড়না কোমরে প্যাঁচায় হাঁটুজল-তক নেমে
হাতের কলসী ডুবায় জলেতে খানিক থেমে থেমে।.......
.....চলমান.....