আমরা প্রতিনিয়ত ছুটে চলছি নিজেদের অহংকারকে ঠিক রাখার পিছনে।ছুটে চলছি অন্যকে হেনস্থা করে,অন্যকে খাটো করে,অপমানিত করে নিজেকে সবার ওপরে রাখার পিছনে।
আমরা স্বীকার করতে চাইনা নিজের ভুলটা-‘না আমি ভুল করতেই পারিনা’। কেও কেও আবার বলেন-এত বছর ভুল করিনি,অনেক কিছু করেছি শুদ্ধ ভাবে। এখন কি ভুল হতে পারে।-হ্যাঁ,পারে! মানুষের বয়স থেমে থাকেনা।তা চলতেই থাকে। আমরা এক জায়গায় থেমে থাকলেও থেমে থাকে না বয়স আর সময়। তারা চলে তাদের নিজস্ব গতিতে,আমরা থেমে থাকি আগের  পুরাতন ধ্যান-ধারণা নিয়ে। আর বার্ধক্য বয়সে ভুল হতেই পারে। বয়সের ভারে আমরা ভুলে যাই অনেক কিছু।আর এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আপনি মানেন কি? হ্যাঁ-আপনি,আপনাকেই বলছি!-কেও কেও মনে করেন সে ভুল করতেই পারে না। বয়স হয়েছেতো কি হয়েছে! ভুল তার হতেই পারে না। সারা জীবন ভুল করেনি এখনও করতে পারে না। আসলে যিনি এ ধরনের কথা বলেন তিনি যদি সঠিকভাবে জীবনের অংকের যোগ-বিয়োগ করেণ তাহলে দেখবেন তার ও জীবনের ভুল ছিলো অনেক-অনেক গুলো।
আপনি কি অস্বীকার করতে পারেন এ ধরণের মানুষের একটা শ্রেণী যে আছে? তাদের হয়তো এটা গোঁড়ামী। তাদের থেকে আমি আপনি কি শিখতে পারি? কি শিখতে পারে সমাজ? তাদের এই গোঁড়ামীর প্রভাব পড়ে সংসার,সন্তান,সমাজের ওপর। আমরা আবার কেও কেও ওটাকে সমর্থনও করি। বলি সঠিক ওনারটা। ওনার মত হলে তুমিও করতে। -হ্যাঁ, আমি করতাম। তবে অস্বীকার নয় স্বীকার করতাম ভুল করতেও পারি।
এই যে অহংকারবোধ, এই যে হার না মানার প্রবণতা আমাদের অনেকের মাঝে কাজ করে। কেও কেও আবার ইচ্ছে করে করে থাকে।
অহংকারের ভারে আমরা কখনো কখনো জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়ি। হয়ে যাই নিজের রাজ্যে মহারাজা। অন্যকে পাত্তা দেয়ার মনে করি না। আমরা মজা পাই যখন দেখি আমার ব্যবহারে আমার কর্মে অন্যজন দুঃখ পায়,অপমানিত হয়।আমরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই অন্যের সাথে। যা আমার নাই তার থেকে বেশী করার, বেশী দেখানোর। একবারও ভাবিনা এধরণের প্রতিযোগিতা কি আমাদের মানায় কি মানায় না! এটা কে কি বলা যায় না- এটা হয়ে থাকে শিক্ষার অভাবে। হয়ে থাকে সমাজ থেকে সত্যিকারের শিক্ষা না নিতে পারার কারণে।
আপনার যে গর্ভবোধ, আপনার যে হার না মানার প্রবণতা। অন্যকে অপমান, হেনস্তা করার যে প্রতিযোগিতায় আপনি লিপ্ত। আপনি নিজের মনের কাছে হিসাব করেণ-দেখবেন যাকে আপনি হেনস্তা করছেন,যার কাছে আপনি অন্যায়ভাবে হার না মানছেন,যার তুলনায় নিজেকে উত্তম মনে করেন নিজে। সমাজে তার থেকে নিচে অবস্থান আপনার।
“আপনাকে বড় বলে/বড় সে নয়। লোকে যারে বড় বলে/বড় সে হয়” কবির সেই কথা আপনি ভুল প্রমাণিত করে দেন। আপনি এই সত্য কথাটা ভুলে যান। ভুল করে ভুলে যান,নাকি ইচ্ছে করে ভুলে যান তা শুধু আপনিই ভালো জানেন।
একথাটা সত্য যে, আপনি যদি অন্যকে কোন কারণ ছাড়া অপমানিত করেন, অন্যকে অপদস্ত করেন, হেনস্তা করেন, অপরকে ছোট মনে করেন। তাহলে ঠিক একই অবস্থান কোন একদিন আপনারও হবে- হ্যাঁ হবে।
কি এমন ক্ষতি হয় যদি নিজের ভুলটা স্বীকার করি। যদি নিজেকে অন্যের চেয়ে অত বড় মনে না করি। যদি বলি মানুষতো- ভুল হতেই পারে।
আমরা কবে শুদ্ধ হবো। কবে শুদ্ধ হবে আমাদের মন? আমার মত পাগলের এই বয়ানের পরে আপনি কি বলতে পারেন-আমি বা আপনি কতটুকু শুদ্ধ আছি,আদৌ কি আছি?