একটা রেলওয়ে স্টেশন, ধারে কোন বস্তির ছিটেফোটা নেই
কয়েকটা জীর্ণ কাপড় ঘেরা  তাঁবু
ধুলোর পাহাড় তাঁবুগুলো;
কয়েকটা কঞ্চিতেই হয়তোবা দাঁড়িয়ে পাইয়াছে ঠাই ।


আমি দাঁড়িয়ে রেললাইনের একধারে
হঠাৎ নয়ন পড়িল ঐখানে,
দেখিলাম এক নারী তাঁবু হইতে
বের হল মাথাটা নোয়ায়ে ।


পড়নে ছেড়া কাপড়, ক্রন্দিছে শিশু ক্রোড়ে
কেশেতে বাধিয়াছে জট;হয়তোবা তৈল পড়ে নাই বহুদিন
দেখিয়া যে কেউই বলিবে তাহায়
মহিলাটি উদ্ভট ।


ছোট একটি গর্ত !
বৃষ্টির কয়েক ফোটা  জল হয়তোবা জমিছে তাহায়,
পরম স্নেহে বুকেতে টানিয়া শিশুটিকে
জননী তাহার ঐ গর্তের জলে নাহিতে নামায় ।


জলের স্পর্শেতে শিশুটির হাত পা
তিড়িং বিড়িং করে,
মচকায় না উল্টায় ! বুঝিতে বিধিধাম
খিলখিলিয়ে হাসে সে শিশু খেলায় মত্ত হয়ে ।


সন্তানের পুলকে নয়ন রাখিয়া
ঐ জননীর মুখেও কি অপরূপ ঝলক !
নেত্রপল্লব উল্টায় না তাহার
সন্তানেই রাখে পলক ।


নাহিবা শেষে সন্তানের তনুতে করে সরষে মর্দন
যে দেখিবে সেই বলিবে;
ইহাই সন্তান তরে মায়ের অমূল্য যতন ।


ওহে বলেতোছিলাম
মহিলাটি উদ্ভট !
শরীল ঢাকিতে টানিতেছে ছেঁড়া বস্ত্রখানি;
তবুও ঢাকিছেনা গা !
এ কি করুণ ! এ কি নির্মম, মর্মান্তিক !
দেখিতে পাইলাম তবে ভব !


থালায় সাজিয়া অন্ন
নিজ হাতে খাওয়াইছে ঐ শিশুটিকে,পান করায়ে ঐ গর্তেরই জল !
দেখিলাম ঐ উদ্ভট মহিলার কান্না ভেজা চোখ
হয়তোবা গালি ঝারছে বিধাতাকে !


ইহাই জন্ম ধাত্রীর মমতা, তাহার অবদান
নিজে না লইয়া অন্ন মুখে
বড় করিছে সন্তান ।


বুঝিলাম আমি বুঝিলাম !
ক্ষনিকের লাগি হয়তোবা আত্মায় শান্তি খুজে পাইলাম ।


কিন্তু এ কি ! আমি কাঁদছি
ধরার ঐ নির্মম দৃশ্য দেখে;
ভাবিলাম নিজেকে লইয়া কিছুক্ষণ
কত সুখী আমি!
তবুও কেন নিজেকে জ্বালাই অহেতুক অশান্তি মেখে মেখে ?


কাঁদছিতো,কাঁদিলাম অনেকখানি
জল যে থামছেনা !
অঝোরে ঝরছেই জল
থামাতেও পারছিনা !


কত নিষ্ঠুর ! এই ধরার নিয়ম
কেউ অট্টালিকায় গা ভাসায়ে !
কেউবা রেললাইনের পাশে
খোলা আকাশের নীচে ।


কেউবা আবার শত পেয়েও অসুখী;
আবার কেউবা বস্ত্রহীন,অন্ন-ছন্নছাড়া
মাথার উপরের ছাউনীটাও নেই
জনমের সীমাহীন দুঃখী ।


বিধাতা তুমিই জানো ভাল মন্দ কিবা ?
গরীব ধনীতে মিশায়েছ এ ধরা
অদ্ভুত ! রহস্যে ঘেরা তোমার লীলা খেলা ।


রেললাইনের পাশ !
ছোট্ট একটা গর্তে জমা জল ;
ছোট্ট একটি শিশু
তাতেই এক মায়ের সৃজিত এ গল্পখানি !
আমার চোখ যে টলমল ।


বুক যে কাঁপিছে, চাপা ক্রন্দনে আমার;
লিখছি তাও হাতটা কাঁপিছে
কি যে বিবেকের তাড়না !
জমিছে বোধহয় হইয়া হিমালয় সমেত পাহাড় ।


আমি কবি নই, তবুও কবিতা লিখিয়া
বাস্তবটাই তুলিয়া ধরি ,
গল্পটাও সত্য ছিল
যারপরনাই বিবেক দংশনে
বারংবার কেঁদে ফিরে মরি ।