বিয়ের পরে আমি শ্বশুরবাড়িতে বহু বছর ছিলাম।
আমার ভীষণ আনন্দে জীবন কেটেছিল।
জীবনে দুঃখ, কষ্ট বলে যে একটা ব্যাপার আছে,
তা ভুলেই গিয়েছিলাম।
কারণ,  আমার  শ্বাশুড়ি ছিলেন খুব আনন্দপ্রিয়
মানুষ এবং আনন্দে ভরপুর করে রাখতেন সবসময়।


আমাদের বাচ্চাদের, মানে আমার আর ননদের বাচ্চারা সবমিলে এক টিচারের  কাছেই পড়তো।
টিচার (মজুমদার স্যার)  এলে বাচ্চারা হইহই - রইরই করতে করতে পড়তে বসতো,
মনে হতো তাদের গল্প বলা দাদু এসেছেন।
তার অবশ্য একটা কারণও ছিলো।
স্যার ভীষণ রসিক ছিলেন এবং
খুব মজা করে গল্পও করতে পারতেন।
মাঝেমাঝে আমি আর শ্বাশুড়িমা গল্পে সামিল হতাম। গল্পের উপাদানও খুব  মজার মজার ছিলো।


একবার আমার ছেলে চুইংগাম গিলে ফেলে।
স্যারকে গিয়ে রুম্মান বলেছিলো,
"আমিতো চুইংগাম খেয়ে ফেলেছি!"
স্যার আমাকে মুন্নি আর আপনি বলে সম্বোধন করতেন, ঠিক ফরেনারদের মতো।
উনি বললেন, "শুনেন মুন্নি, রুম্মান তো বিপদে পড়েছে, চুইংগাম গিলে ফেলেছে!
এখন তো আর ওর পটি হবেনা সবই আটকে গেলো!"


বাচ্চাদেরকে বলতেন,
"আমার কাছে জিল্লুভূত আছে!"
এবং এই জিল্লুভূত দিয়েই উনি ওদের পড়াগুলো আদায় করতেন। জিল্লুভূতকে কিন্তু বাচ্চারা মোটেও ভয় পেতো না বরং জিল্লুভূত তাদের  ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছিলো।


স্যার আমাদের ভীষণ প্রিয় একজন মানুষ।
আমাদের এতো আন্তরিকতা  যে, ফ্যামিলি নিয়ে এসে ঘুরেও গেছেন আমার বাসা থেকে।


কিছু বছর পর আমি যখন হাজব্যান্ডের জবের কারণে চিটাগং এসে সংসার শুরু করলাম, তখন সদ্য চিটাগং ইউনিভার্সিটি থেকে বের হওয়া চাকরিরত এক ছেলে আমাদের  সাথে পরিচিত হয়, নাম জিল্লু।


আমার বাচ্চারা বেশ মজা পেলো।
তারা মনে করেছে তাদের অতিপ্রিয় জিল্লুভূত তাদের কাছে এসে গেছে।তারা ভীষণ খুশি।


কিছু দিনের মধ্যে জিল্লুভূত আমাদের  বেশ আপন হয়ে গেলো। তার বিয়েতেও আমরা বেশ বড়ভাই, ভাবীর মর্যাদা পেয়েছি। যদিও তার বিয়েও আমাদের মাধ্যমে হয়েছিলো।


যাই হোক, কিছুদিন আগে জিল্লু আমাদের বাসায় এসেছিলো। আমার  সাথে ফেসবুকে এড হয়েছে।
আমার মোবাইল নিয়ে জিল্লুই সব করলো, আমার ছোটোভায়ের মত। এরপর একদিন মেসেঞ্জারে Hi! পাঠালো। আমিতো অবাক! একি জিল্লুর আইডি, নাকি শ্মশানঘাট?


সন্ধেহ দূর করার জন্য জিল্লুকে মেসেজ দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি জিল্লুভূত?" ওপার থেকে জবাব এলো "হুম!" আমি বললাম, "ছবি কই? অন্তত বাচ্চার  ছবিতো দিতে পারো!" জবাবে বলল, "ভূতের  কি কোনো ছবি হয়? ভূত তো অদৃশ্য!"


একটা ব্যাপার আমি বিশ্বাস করি যে, সম্পর্ক শুধু রক্ত বা আত্মীয়তা থেকে হয়না। খুব মনে পড়ছিলো, তাই  তাদের নিয়ে কিছু মধুর স্মৃতি বর্ননা  করলাম।