আমি আলালের ঘরের দুলারী।
আমার মতো সুখ
ক'জনের আছে বলো?
আমার স্বামী সরকারি চাকরি করেন,
বেশ হোমড়াচোমড়া।
আমার কোনোকিছুর অভাব নেই।
ছেলেরা আমার উচ্চ শিক্ষিত।
অনেক বড় হয়েছে। বিয়ে করেছে।
শোনো, আমার কোনো অভাব নেই।
তবুও এ কোন শূণ্যতা
আমায় পেয়ে বসেছে?
এতবড় বাড়ি,
কি নেই এখানে?
তবুও আমি একা।
ওগো, তোমরা কি কেউ শুনছো....
আমার বোবা মনের আর্তনাদ?
আমার বিছানার চাদর
দুঃখের সূতোয় বোনা,
বালিশটা চোখের জলে সিক্ত।
কেনো আমার এমন হলো,
আমি কি খারাপ ছিলাম?
কই, কখনো তো কারো খারাপ চাইনি!
দেখতেও তো অনেক সুন্দরীই ছিলাম!
কেনো আমার এমন হোলো?
তুমি কি আমার থেকে-ও
সুন্দরী পেয়েছিলে?
তাই আমায় ছেড়ে ছিলে?
একবারও ভাবলেনা!
আমি যে তোমার জন্যই
নিবেদিতপ্রাণ ছিলাম!
তোমাকে ছাড়া একবিন্দুও
ভালো লাগতোনা আমার!
এটাইকি আমার অপরাধ?
সবাই তোমার বিরুদ্ধে
অভিযোগ তুলতো।
ঘরে বসেই সবকিছু
আমার কানে আসতো!
মনে করতাম
যাই করোনা কেনো,
এক সময়তো নীড়ে ফিরবেই!
সেই সবকে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি,
এটাই আমার অপরাধ?
নাকি তোমাকে ভালো বেসেছি,
এটাই অপরাধ?
কোন অপরাধে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী
আমার সামনে হাজির করলে?
মেয়ের বয়সী এক মেয়েকে?
তোমার কি একটুও বুক কাঁপলো না?
আজও আমি আমার
সেই ঘর খুঁজি।
সেই আদর মাখা,
সোহাগ ঢাকা বাড়ি।
আমার সঙ্গী এখন
এই আলিশান প্রাসাদ,
আর আমার চোখের জল।
চারিদিকে শুধু খাঁ খাঁ করছে।
যাদের জন্য আমি আর দ্বিতীয় চিন্তা করিনি,
তারা আজ কোথায়?
কাঁদতে কাঁদতে নোনাজলের
সাগর তৈরি করেছি,
সেই সাগরের ঝিনুক থেকে
আমার দুঃখে গড়া মুক্ত নিয়ে
মালা গেঁথে গলে পরেছি।
সেই সাগরের সাম্পানে আমি একলা যাত্রী।
বৈঠা আমার সঙ্গী।
যাদের কথা চিন্তা করে
সুখকে বিদায় দিয়েছি,
তারা আজ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।
আমি কি এখন বলবো,
কেউ আমার মতো ভুল করোনা?
কিন্তু আমি যদি এই ভুল না করতাম,
তাহলে আমার বাচ্চা দুটো মানুষ হতনা।
আমার সুখ হয়তো হত, কিন্তু
আমার বাচ্চা গুলোর কি হত?
আমি কি ভুল করেছি?
ভুল করেছেতো তারা,
যারা এক এক করে
ছেড়ে চলে গিয়েছে।
আমার কথা যারা
কেউ ভাবলো না!
যাদের জন্য না খেয়ে
অপেক্ষা করে বসে থেকেছি,
তারা এসে বলেছে
- মা আমরা বাইরে খেয়ে এসেছি....
আমি যদি ভুল করে থাকি
তাহলে সেই ভুলের মাশুল তো
আমারই গুনতে হবে, তাই তো?
না, আমার বিশ্বাস
আমি কোনো ভুল করিনি।
আহা! আমার বাছারা।
তোরা সুখে থাক তাই তো চাই!
তখনো তোদের ভালো চেয়েছি,
আজও তাই-ই চাই।