মাঝে মাঝে ভুল করো— হৃদয়ের তন্ত্রী ছুঁয়ে বাজাও অচেনা সুর, যে সুরে মানুষ থমকে দাঁড়ায়, শুনতে চায়, বুঝতে চায়— তুমি এখনো জীবন্ত, এখনো জাগ্রত, এখনো কাঁপছো স্বপ্নের স্পর্শে।
মাঝে মাঝে ভুল লিখো— শব্দের শরীরে ফাটল ধরাও ইচ্ছাকৃত, যাতে চুপ থাকা পাঠকও মুখ খুলে ফেলে, ভুলের বিনিময়ে উঠে আসে হৃদয়ের গোপনতম কথা।
দুধ যখন কর্কশ হয়, জন্ম নেয় দইয়ের কোমলতা, দই যখন নিজেকেও ছাড়িয়ে যায়, রূপ নেয় পনিরের ঐশ্বর্যে। ভুলের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে উত্তরণ— একটি ক্ষয় মানে আরো মহার্ঘ্য জন্ম।
আঙুরের মধুর রস টক হয়ে ঝরে পড়ে— কিন্তু সে কান্না ফুরোয় না, সে রূপ নেয় ওয়াইনের রক্তিম গৌরবে। ভুল মানে ব্যর্থতা নয়, ভুল মানে নব জন্মের আভাস।
কলম্বাস পথ হারিয়েছিল বলে জন্ম নিয়েছিল নতুন পৃথিবী, নতুন ইতিহাস। ফ্লেমিংয়ের ভুলে প্রস্ফুটিত হয়েছিল পেনিসিলিনের জীবনরক্ষা কাব্য। এডিসনের ব্যর্থতায় ছড়িয়ে পড়েছিল আলোর অভিষেক।
ভুল মানুষের প্রেমে পড়া— এও তো আত্মার শুদ্ধি, হৃদয়ের সমর্পণ, ভুল পথ দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায় সত্যের দীপ্ত শিখা।
কথায় আছে— নিখুঁত মানুষ নেই, থাকবে না কোনোদিন। ভুলহীন জীবন, নির্জীব নদীর মতো—নিস্তব্ধ, স্রোতহীন, স্বপ্নহীন।
পেন্সিলের মতো হও, যে ভুল করলে পেছন ঘষে মুছে আবার আঁকে— নতুন আকাশ, নতুন দিগন্ত। কলমের অহঙ্কারে হারিয়ে ফেলো না নিজেকে, কারণ কলম ভুল মুছে ফেলতে জানে না, পেন্সিল জানে— পুনর্জন্ম , নতুন করে সাজানোর মন্ত্র।
ভুল করো, আবার ভাঙো, আবার গড়ো— ভুলের ভেতরেই লুকিয়ে আছে তোমার সবচেয়ে নিখাদ সৌন্দর্য, ভুলের রেখায় আঁকা তোমার অনন্ত যাত্রা।
১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২; ঢাকা।