মা কখনো সমুদ্র দেখেনি, সমুদ্র গর্জন শুনেনি
সমুদ্রের ঢেউ দেখেনি, নোনতা পানির স্বাদ পাইনি
রাত্রির বাতাসের শব্দকে বুকে জড়িয়ে ঘুমতো সমুদ্র ভেবে
না, মা কখনো আমাদের ছেড়ে সমুদ্রতীরে যেতে চাইনি ।
লালাভো সূর্যটা প্রতিদিন জ্বলে ঈশান কোণে
প্রতিদিন নেভে,
জীবনের আর  একটা দিন চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়
বেলাগাম পৃথিবী স্তব্ধ থাকে ।
আর চারটে দিন পর মায়ের চুয়ান্ন পেরোবে
ভেবেছি মা’কে শহরতলিতে নিয়ে যাব ঘুরাতে ।
রাত তিনটে পনেরো
রাতের আকাশে মা রামধনু দেখল
আমাকে দেখাল
রুপোলী চাঁদটার চারপাশে বলয়
দূরে একটা তারা
মায়ের মুখে উজ্জ্বল হাসি
জন্মদিনের আগে মায়ের জন্য সেরা উপহার ।


পরদিন ভোঁর পাঁচটা ছাব্বিশ
হটাৎ দমকা হাওয়া দরজায় কড়া নাড়ল
সশব্দে
এই বুঝি ভেঙ্গে ফেলবে
দূরে একটা ধপ শব্দে কেঁপে উঠল ঘর  
মায়ের চোখে মুখে আতঙ্ক
বিকেল পাঁচটা পাঁচ
এক হাঁটু জল তখন ঘরের ভিতর
“খোকন তুই উঁচু ফ্লাটটাই যা”  – মায়ের করুন গলা
তারপর আর মনে নেই
আজ পনেরোই নভেম্বর
আজ মায়ের চুয়ান্নতম জন্মদিন
কিন্তু সারি সারি লাশেদের ভিড়ে আমার মা’কে
কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা ।
হাইয়েনে গোটা দেশ স্তব্ধ
আমাদের ঘরটা এখন জলের নীচে
ওই ,ওই  একটা লাশ ভেসে যাচ্ছে
একটা নয়, ওইতো পেছনে আরো এক সারি
ওটা কে ! ওইতো ওখানে
নাহ, আমার মা নয়
ওটা অন্য কোন হতভাগ্যের মা ।
মা কোনদিন সমুদ্র দেখেনি ; সমুদ্রের নির্জনতা দেখেনি
আজ সমুদ্র যখন মায়ের পায়ের তলায় এসেছে
তখন আমার মা’কে আমি কিছুতেই
আর খুঁজে পাচ্ছিনা ।