সত্তর ছুঁই ছুঁই নুইয়ে পড়া অশীতিপর বৃদ্ধা
বিতাড়িত সদ্য গত স্বামীর ভিটে মাটি থেকে
ভাবে, এমন দয়ামায়াহীন পাষাণ পৃথিবীর বুকে
বেঁচে থেকেই বা লাভ কি?
সাধ আহ্লাদের ভিটে-মাটির শেষ মায়া ত্যাগে
প্রাণ ত্যাগের আশায় নিঃশব্দে একাকী এগিয়ে যায় গঙ্গার তীরে।


ইচ্ছেখানি অতি সামান্য, যদি মেলে কোনও সহজলভ্য মরণ-উপায়
সন্ধানী চোখ ইতিউতি বুলিয়ে নেয় পারিপার্শ্বিক দৃশ্যপট
সকাল সকাল গঙ্গাতীরে মানুষের আনাগোনা নগণ্য
মনে মনে ভাবে বৃদ্ধা ভালই হল, অন্তিম-যাত্রা সুগম হবে।


কিছু দূরে ঘাটের ওপাশে ন্যাড়া মাথায় খালিগায়ে
এক ছোট্ট বালক একাকী দাঁড়িয়ে হাটুজলে
চোখের কোণে জমে অল্প অল্প অশ্রুবিন্দু
তালুর মাঝে বটপাতায় রাখা তিনটি চালের দানা
পিতা আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে পিণ্ডদানের আশায় গঙ্গাতীরে  
শিকারির মত নজর তার এদিকে ওদিকে
কখনও গাছের ডালে, কখনও বা কার্নিশের কোণে
আশায় কাকেদের খোঁজে।  
শাস্ত্রের বিধান যদি তারা স্পর্শ করে চাউল দানা
মুক্তি পাবে একূল আর ওকুলের তিন পুরুষ পর্যন্ত।  


ছাঁৎ করে ওঠে বৃদ্ধার হৃদয়খানি
মনে মনে ভাবে এ মায়াবী পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে ,অন্ত নেই দুঃখের
একদৃষ্টে চেয়ে চেয়ে অতিবাহিত হল তার অনেকখানি সময়  
ধীরে ধীরে হাসিমুখে এগিয়ে আসে ছোট্ট বালকের সহায়তায়
যাক এ যাত্রায় আত্মহত্যা আপাতত স্থগিত হল।