তুমি কি চিনতে পেরেছ আমায়
আমি বনলতা, তোমার বনলতা
কতদিন পরে দেখলাম তোমাকে
বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছ
তোমার মুখটাও যেন ভারি
এলোমেলো পাকা চূল, মাথায় টাক
চেনা যায় না তোমায়
তুমি এত বদলে গেছো  
বদলেনি শুধু তোমার মুখের অমলিন হাঁসি।


মনে পড়ে সেদিনের কথা
তুমি এসেছিলে নিতে আর
আমি ছিলাম বিয়ের পিঁড়িতে
তুমি ফিরেও তাকালে না একবার
সেই যে চলে গেলে ...
মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম
ভেবেছিলাম মনে মনে, ফিরে পাব।


জানি, বাবার জেদের কাছে হার মেনেছিলে  
আমার অমতে বিয়েটা হোল,
পরপুরুষের হাতে সঁপে দিয়ে
তুমি হারিয়ে গেলে ভিড়ের মাঝে
এত ঠুনকো ছিল আমাদের প্রেম
না ছিল বোঝাপড়ার অভাব।


বন্ধুরা বলেছিল বনলতা, কি সুন্দর বর পেলি
সকলে ছিল আহ্লাদে আটখানা
অনুষ্ঠানেরও কোন ত্রুটি ছিল না
সকলেই ছিল, শুধু ছিলে না তুমি
ছিল না আমার মন ।


তুমি তো দেখলেই না, কত সুন্দর সেজেছিলাম সেদিন  
বকুলদি বলেছিল, বনলতা  কি সুন্দর তুই!  
শ্বশুরবাড়ির সবাই খুশী আমাকে পেয়ে!
দিনগুলো সুন্দর কেটেছিল তাদের!
বৃথা চেষ্টা করেছিলাম তোমাকে ভুলতে
পারিনি, না আমি পারিনি
খুঁজেছি তোমায় প্রতিক্ষণে
নতুন বরের মাঝে ।


আজ সব শেষ, আমি মৃত্যুর সমীপে
জীবনের শেষক্ষণে দাঁড়িয়ে
অপেক্ষায় আছি, যমরাজের আগমনের    
মনে হয় সে ব্যস্ত অন্যত্র দায়িত্ব পালনে ।


খবরটা তোমাকে জানাবোনা ভেবেছিলাম
তবুও জানাতেই হয়, পারলাম না
দু যুগ পরে তোমায় শেষ বার দেখব বলে।


তুমি কি আজও পিয়ানো বাজাও?
যেমনটা, বাজাতে আগে
না তুমি ভূলে গেছো সুরগুলো ।


শোনাও অন্তিম বার , নিভিয়ে দিয়ে আলো
শোনাও না সেই সুরগুলো
যে সূরগুলো শুনতাম মগ্ন হয়ে তোমার কাঁধে হাত রেখে  
যে সুরের মূর্ছনায় কলরব করত পাখিগুলো
যে সুরের মূর্ছনায় ভারি হয়ে উঠত সন্ধ্যের বাতাস ।