//** আমাদের পরম করুণাময়ী, মমতাময়ী  মায়েদের সমস্ত ছেলেদের কে উৎসর্গ করলাম**//


সময় কি থমকে গেছে?
ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দ আর কানে বাজে না
শীতের সকালের মিষ্টি রোদের পানে চেয়ে দেখি অপলকে
সারারাত ধরে ঝির ঝির করে ঝরে পড়া শিশিরগুলো
ক্ষণিকের রোদের তেজে কোথাই যেন হারিয়ে যায়।


এই তো সেদিনের কথা, সব কিছুই ছিল,
ছিল উদ্দম যৌবন, বুকের মাঝে ডরহীন অদম্য সাহস
আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ছিল আর ছিল এভারেস্টের উচ্চতার আশা  
তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠেছি, আর বেয়েই চলেছিলাম নিরন্তর
সব কিছুই ছিল হাতের মুঠোই, জীবন ছিল নদীর ধারা
গা ভাসিয়ে বয়ে চলছিলাম মহাআনন্দে সে শীতল ধারায়
সে দিন তো ছিল সব কিছুই, ছিল না শুধু সময়
ফেলে এসেছি জীবনের সেই সুন্দর দিনগুলো।


সবকিছুই তো চলছে নিয়মের বেড়াজালে, তবুও সময় যেন থমকে
সবকিছু আছে নেই শুধু সেদিনের আমি আর মা,
প্রকৃতির একি উপহাস, আমি আজ অধিষ্ঠিত মায়ের স্থানে  
স্মৃতির ভিড়ে ঢুঁ মেরে, ডাইরির পাতাগুলো পাল্টানোর ভান করি
হঠাৎ এক ছোট্ট একটি নামের মাঝে হারিয়ে যায়
হ্যাঁ, এক ব্যস্ততম সকালে মায়ের ধরিয়ে দেওয়া চিরকুট
আর অনুনয়ের সুরে কথাগুলো, এখন  কানে স্পষ্ট তরতাজা
সেদিন বাজেনি, হয়তো শোনার চেষ্টাও করিনি
অবহেলায় চিরকুটটি দেখে রেখেছিলাম টেবিলের মাঝে।


মা বলেছিল “বাবা হাতে পায়ে খুব ব্যথা, রাতে ঘুম আসে না,
সারারাত ছটপট করি, একাকী, অবসর সময় আর কাটে না,
কিছু ব্যথার আর ঘুমের ওষুধ এনে দেবে বাবা,
অনেক দিন দুচোখের পাতা এক করিনি”
আজ বার বার চোখের পর্দায় ভেসে উঠছে
মায়ের বেদনাময় অসহায় চেহরা আর নীরব চাহনি
পুরনো স্মৃতিগুলো সব তাড়া করে, ভিড় করে মনে
সেদিনের পুরনো চিত্রনাট্য যেন নতুন রূপে পুনরায় মঞ্চস্থ ।


আদরের ভাঙা হাতলহীন আরাম কেদারাটা যেন বিদ্রুপ করে
নীরবে উঠে, মায়ের ঘরের জীর্ণ সুটকেস খুলে দেখি
চিরকুটটি মা সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে তার মাঝে।
সেদিনের ডাইরির পাতায় বিচরণ করি  
অনুতপ্ত আমি, সিক্ত আজ অশ্রুজলে
না, সেদিন ওষুধ কেনা হয়নি।