অন্ন সন্ধানে জীবন বিষময়
কর্মহীন জীবন গাঁথা,
নারী জনম পুরুষ দৃষ্টি
প্রতিটি ভাঁজে-খাঁজে উচ্চতর যেথা ।


মেলেনি কোথাও কাজ যাকে বলে সুকাজ
তাই আমার নিবেদিত প্রানের ভর্তুকি-
সহস্রাধিক পুরুষের বিনোদনের উৎস-
নৃত্যের তালে তালে –নর্তকী ।


হ্যাঁ আমি নর্তকী... নাচি,নাচাই,দোলাই
আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জন সমক্ষে,
হ্যাঁ আমি খেঁটে খাই, পরিশ্রমী
টাকা কামাই তোমাদের চোখের তৃপ্তিদান সাপেক্ষে ।


রাস্তা দিয়ে হেঁটে মেলে মধু  লোকবানী
চেঁচিয়ে বলে বেশ্যা-শরীর বেঁচে খায়,
আবার ভাবখানা দেখ যেন স্বয়ং মহারাণী;
তখন তো কেউ দেয়নি খেতে,এখন কি এসে যায় ?


ওঁরা বলে আমাদের নাকি মন হয় না
মনের জায়গায় বাস করে দেহ,
সমাজের পাপের বোঝা,কুলাটা
রাতে ওরাই আবার জলসায় আসে কেহ ।


হাসিনা-ভুলে গেছি,নাকি শুকিয়ে গেছে যেন রঙ
খারাপ লাগতে নেই আমাদের-
তবে সেটা মনে হবে যেন ঢঙ;
দাঁত বের করে নাচে, ওটা হাসি নয় ?


হ্যাঁ দাঁত বের করে নাচতে হয় নর্তকীর-
দাঁত বেরোলেই তাঁকে হাসি বলে কি ?
অন্তরালে কি আছে সবই কি মুল্যহীন ?
নাকি আমাদের অন্তরাল ও থাকতে নেই ?


তবে কেন এই নর্তকীর জন্ম হল ?
কে জবাব দেবে ?
সেই মাত্র বারো বছর বয়সে যেদিন-
কাজ করতাম বাড়ীতে বাড়ীতে-সেদিন...?


ভুলিনি মধ্যবয়সী বল্টু কাকুর নেত্রদ্বয় যেন-
ভেঙ্গে ঢুকে পড়তো সর্বদা আমার সামান্য বুকে;
কই সেদিন কোথায় ছিল এতো মহামানবেরা ?
আজ তো যে যেখান থেকে পারছে যাচ্ছে ঠুকে ।


বৃদ্ধা মা, পিতৃহারা-পাশে কই
দাঁড়ায়নিতো কেউ-
কেউ দেয়নি তো ওষুধের দাম-
সব পুরুষেরই চোখে দেখেছি--কাম ।


হ্যাঁ আমি বাইজি, ঝাকানাকা নাচি, নাচাই-
অর্ধনগ্ন পোশাকে দোলাই- কোমর,নিতম্ব, বক্ষ-
হ্যাঁ আমি কর্মহীন নই কাজ করে বাঁচি, বাঁচাই,
পয়সা কুড়াই তোমাদের কু-নজর সহ্য সাপেক্ষ ।


বয়ে গেছে সময়,পরিবর্তন মহাবিশ্বের-
বিজ্ঞানের অবদান- কত কি আরও
ইন্টারনেট, অত্যাধুনিকতার ছোবল
উলঙ্গ যুগ-নাচে আর মন ভরে না কারো ।


নৃত্যে মন্দা,অনাহার,অর্ধাহার-
হতাশায় যেন জীবনের হার,
নীচে তো নেমেছি-ই বাজে তো বলেই-
তাই আরও একটু অত্যাধুনিক হলে ক্ষতি কি ?


হ্যাঁ আজ আমি পতিতা- ওঁরা যাকে বলে বেশ্যা-
বলুক-বেঁচে থাকা তো চাই তাই ধর্ম কাজ;
কিন্তু সেদিন তো ছিলাম না-
ভাগ্যের পরিহাসে হতেই হল আজ ।


মনের বিরুদ্ধে দেহ তো সেই কবে-
কেড়ে নিয়েছিল কয়েকবার-
সেদিন তো আর জানতাম না
নারী জনম দেহ খেলার বাহার ।


সন্ধ্যা বেলায় কাজ করে ফেরার পথে
মাত্র দশ টাকা দিয়ে চুমু খেত মন্তু দা একা পেলে-
আর পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ঝন্তু দা
ঝোপের আড়ালে নিয়ে কি সব করত প্যান্ট খুলে ।


ব্যথা পেলেও ছাড়ত না, বলতো
টাকা ফেরত নেবে তাহলে-
মায়ের ওষুধের কথা ভেবে-
সব কষ্ট সয়েছি নীরবে, নির্জলে ।


এখন আর কষ্টও হয় না- ব্যাথা ও  পাইনা-
টাকা পাই রাশি রাশি;
প্রচুর ভাল আছি-
এখন আমি অনেক অনেক হাসি ।


সেদিন একটা বউ বলে বেশ্যার হাসি দেখ - হে হে
ফুর্তি করে টাকা পায় আর মস্তি করে বেড়ায়;
ওর স্বামীর কাল নাইট ডিউটি ছিল-
সেই টাকায়ই আমি হাসছি- হে হে হে ।


আমার শুধু হাসিই দেখে ওঁরা
দেখে আমার মস্তি,ফুর্তি-
জানেনা এই দেহের মাঝে সতত একটা
বিষের বাঁশি করুন সুরে গেয়ে যায়-।


কেন এমন হলাম ? কেন পারলাম না ?
স্বাভাবিক নারীর মত একটা
সম্মানের জীবন নিতে বেছে-
জনমটা হল যেন ষোল-আনাই মিছে ।।