আচ্ছা মা,ধরো আমি তোমাকে ছেড়ে তোমার আগে চলে
গেলাম দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে;
বলো,দেখি কেমন লাগবে তোমার তবে;
তোমার ছেলে টি আর তো আসবেনা ফিরে;
তুমি মোটেও দোয়া করো না দ্বিতীয়বার টি আমায় আর দেখতে,
আমার চলে যাওয়াতে হয়তো তুমি অনেক কাঁদবে কিন্তু হাসবে শতকোটি হৃদয়।
মা রে,তুমি দোয়া করে দাও আমি যেন শহীদ হয়ে যেতে পারি বাংলার জন্যে;
পাকবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্রের সামনে আমি যেন না পাই বিন্দুমাত্র ভয়,
তাজা রক্ত ঢেলে ছিনিয়ে যেন আনতে পারি বিজয়।
মা আর ক'টা দিন অপেক্ষা করো;
পূর্ব আকাশে দেখবে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যোদয়;
সেদিন বাতাসে বাতাসে তোমার ছেলের রক্তের ঘ্রাণ পেয়ে
তোমার ভেতরের কোটি শোক,লাখো আর্তনাদ দাফন দিয়ে
আমায় একটু তোমার মুচকি হাসি দেখিয়ে দিও।
আর আমার হাসি মাখা মুখখানি শেষ রাতে মোনাজাত শেষে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখে নিও।
স্বাধীন দেশের শত শত মায়ের হাসির মাঝে আবার হয়তো ফিরে পাবে তোমার এই দুষ্টু ছেলেটিকে;
আমায় হয়তো ফিরে পাবে আবার তুমি রাখালের নাটিকা দলে,
ফিরে পাবে আমায় বাংলোর পেছনের বাগানের ফুলে ফুলে,
ফিরে পাবে আমায় উত্তরের পুশকুনিটার কৃষ্ণচূড়া তলে,
ফিরে পাবে আমায় অপরাজিতার নেভি-নীলে,
আমায় ফিরে পাবে মরিচায় গেরুয়া রং বারান্দার গ্রীলে,
আমায় ফিরে পাবে ছীপ হাতে দক্ষিণের বিলে,
আমায় ফিরে পাবে কলাগাছের ভেলায় পাশের খালে,
ফিরে পাবে আমায় ট্রাংকের লাঠিম আর চকচকে মার্বেলে,
ফিরে পাবে আমায় আমগাছটার নিচে চাপকলে,
ফিরে পাবে আমায় মাচানে লুকিয়ে রাখা পাকা তালে,
ফিরে পাবে আমায় বালিশের নিচে সাদাকালো ছবিটার রীলে;
প্রতিদিন এভাবেই মনের ভুলে কিবা ভুলের ছলে
হয়তো হাজারো বার মা তুমি আমায় ফিরে ফিরে পাবে।
আবার হঠাৎ মরীচিকার ন্যায় আমায় খুঁজে খুঁজে
হয়রান হয়ে সন্ধ্যেবেলা ভার মুখে শূন্য হৃদয়ে ঘরে ফিরবে।
আমায় যখন খুব বেশি মনে পড়বে
আমার ঘ্রাণ নিও তোমার আসমানী শাড়িটার ছেঁড়া আঁচলে ।
শেষবারটি তোমার হাতে শোল মাছের ঝোল আর লাউঘন্ট
খেয়ে মুখ মুছেছিলাম সেই আঁচলের ভাঁজে।
লিখতে তো মন চাচ্ছে আজ মা পৃষ্ঠা ভরে ভরে,
কিন্তু মা যুদ্ধে যাওয়ার সাইরেন যে বেজে উঠেছে।
মা যেদিন শুনতে পাবে বাংলা স্বাধীন হয়ে গিয়েছে,
আমার পায়রাগুলোকে উড়িয়ে দিও মুক্ত আকাশে,
বুবুকে মা বিয়ে দিও তখন এই স্বাধীন দেশে।
আচ্ছা মা তোমার মনে আছে,
সেই মহিলা সাহাবী খানসা রদিআল্লাহু আনহা একে একে চার ছেলেকে জেহাদে পাঠিয়ে নিজে ক্রন্দন ভুলে ইসলামের জয়ের জন্যে ব্যস্ত ছিলেন মোনাজাতে।
চার ছেলেদের সকলে শহীদ যখন হয়ে গেলো,
খবর শুনে সেই মহীয়সী নারী বলে উঠেছিলো-
রোজ হাশরের মাঠে গর্ব করে সর্বসম্মুখে বলবো
আমি চার শহীদের মা।
মা রে,তোমার তো একটাই ছেলে আমি,একটি ছেলের জন্যই না হয় তুমি সেদিন গর্ব করো।
ইহকালের তরে মা হয়তো তোমার কোলে শুয়ে আর আমি ঘুমোতে পারলাম না।
কিন্তু পরের জীবনে মা আমি তোমার কোলে শুয়ে লম্বা
একটি ঘুম দিবো ।
মন ভরে ঘুমোবো।
বিদায় মা।