আজকাল প্রায়ই শুনি—“কবিতা কে পড়ে?” কিংবা, “এই যুগে কবিতা চলে না।” এই কথাগুলি শুনলে একধরনের শীতল বাতাস বইয়ে যায় হৃদয়ে, যেন কেউ আমার অন্তর্জগতের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলে, “তোমার অনুভবের ভাষা বাতিল।”
আমি একজন চিকিৎসক। পেশাগতভাবে আমার প্রতিদিনের জীবন জড়িয়ে আছে মানুষের শরীর, যন্ত্রণার মানচিত্র, এবং কখনো-কখনো মৃত্যুর নীরবতা নিয়ে। এই অভিজ্ঞতা মানুষকে দু'দিকে নিয়ে যায়—কেউ হয় কাঠিন্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, কেউবা অনুভবে আরও নরম হয়ে ওঠে। আমি দ্বিতীয় জন। আমার কাছে কবিতা হলো সেই শ্বাস যেখানে আমি বেঁচে থাকি।
কবিতা আমার কাছে নিছক অলংকার নয়, এটি আমার আত্মার প্রতিবাদ—নৈরাশ্যের বিরুদ্ধে, যন্ত্রমানবতার বিরুদ্ধে, নির্বেদের বিরুদ্ধে। যখন আমি একটি কবিতা লিখি, তখন আমি কেবল ছন্দ বা শব্দ গুছিয়ে দেই না, বরং আমি আমার দেখা রুগীর চোখে জমে থাকা শেষ কণাটুকু জল, অথবা কোনো বৃদ্ধার নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাসকে ভাষা দিতে চাই।
সমালোচকরা যখন বলেন, “এ যুগে কবিতা কেউ পড়ে না,” তখন তাঁরা হয়তো ভুলে যান—যে ‘যুগ’ কথাটি তাঁরা উচ্চারণ করেন, তা শুধু প্রযুক্তির নয়, মানুষেরও। আর মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে, সে ততদিন তার অনুভূতি, তার একাকীত্ব, তার প্রেম ও বিচ্ছেদের ব্যথা প্রকাশ করতে চাইবে। কবিতা সেই চিরন্তন পথের যাত্রী।
প্রকাশনীরা যখন বলেন, “অন্য কিছু থাকলে জানাবেন”—তাঁরা আসলে একটি চাহিদার বাজার দেখেন, হৃদয়ের বাজার নয়। আমি তাদের দোষ দিই না, কারণ তারা ব্যবসায়ী। কিন্তু আমি একজন কবি, আমি হৃদয়ের ব্যবসা করি না। আমি জানি, আমার কবিতা লক্ষ পাঠকের হাতে পৌঁছাবে না, কিন্তু যদি একজন পাঠকের বুক কাঁপে—তবে সেটিই আমার পরম প্রাপ্তি।
আমি কবিতা লিখি, কারণ আমি বাঁচতে চাই। আমি কবিতা লিখি, কারণ তা আমার স্বস্তি, আমার মুক্তি, আমার উপলব্ধির অক্ষররূপ।
আপনারা যদি কবিতাকে অবহেলা করেন, করবেন। কিন্তু জানবেন—আমি লিখে যাব, কারণ কবিতা আমার কাছে ট্রেন্ড নয়, প্রয়োজন।
এই যে প্রকাশনী থেকেও বলে কবিতা তেমন চলেনা আমি ঐসব প্রকাশনীদের সমালোচনা না করে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। আমার কবিতার বই ইনশাআল্লাহ আমি একদিন প্রকাশ করবো এবং অর্থের বিনিময়ে নয় বরং কেউ আমার কবিতায় যখন নিজের ছবি সমাজের ছবি প্রেমের ছবি খুঁজে পেয়ে নিজে থেকেই প্রকাশক হতে চাইবে সেদিন। জমুক কবিতা। দুই হাজারের উপর কবিতা আলহামদুলিল্লাহ্ এখন অবধি আছে। কাছের মানুষজন সহকর্মীরা ছাত্রছাত্রীরা প্রায়ই নিজে থেকে কবিতা শুনতে চায় আমার কাছে এটাও বা কম কি! সুনাম প্রশংসা ভাইরালের নেশায় যা লেখা হয় তা অন্তত আর যাই হোক কবিতা হতে পারেনা।