একটা গ্যারেজ। শহরের এক উঁচু ভবনের নীচতলা।
এক পাশে একটা গাড়ি,একটা প্রাইভেট কার, একটা মোটরসাইকেল।
আর অন‍্য পাশে অর্ধেক ইটের একটা ঘর।
সেই ঘরে থাকে জাফলীল।

হ্যাঁ, জাফলীল—একটা ষাঁড়।
কেনা হয়েছে ছয় মাস আগে, কুরবানির জন্য।
তখন থেকেই সে যেন এই পরিবারেরই একজন।

বৃদ্ধ বাবা সন্ধ্যেবেলা কয়েল ধরান।
নিশাঝ আর নওফেল - দুই ভাইবোন;
তারা নিজের হাতে খাওয়ায় জাফলীলকে,
গা ঘঁষে ঘঁষে চুলকে দেয়।
ডেটল সাবান দিয়ে গোসলও করিয়ে দেয়।
শুক্রবারে তাকে নিয়ে যায় ডিয়াবাড়ি মাঠে,
জাফলীল ঘুরে বেড়ায়, দৌড়ায়, হাসে।

নওফেলের মা প্রতিদিন জাফলুর জন্য রাঁধেন জাউ ভাত।
পোলাও চালের ঘ্রাণে ভরে যায় গ্যারেজের কোণ।
আর জাফলীল? সে চুপচাপ খায়, চোখে এক অদ্ভুত শান্তি।

ছয় মাসের আদরে, সে শুধু ষাঁড় থাকে না—
সে হয়ে ওঠে আপন, প্রিয়, এক ভালোবাসার মুখ।

অবশেষে একদিন ঈদ আসে।
ঈদের সকাল। নামাজ শেষে সবাই চুপচাপ।
আকাশে রোদ, বাতাসে কুরবানির খুশবু।

জাফলীল দাঁড়িয়ে থাকে, চোখে তার নির্ভরতা।
আর নওফেল?
তার হাতে ছুরি।

তার বুকের ভেতর আচমকা ঢেউ ওঠে,
কিন্তু সে জানে, এই কষ্ট, এই বিচ্ছেদ—
এটাই কুরবানী।

আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়, নিজের প্রিয়কে ত্যাগ করা।
সে চালায় ছুরি, কাঁপা হাতে, ভেজা চোখে।
আল্লাহু আকবার
আল্লাহু আকবার।
আর পর্দার আড়াল থেকে নিশাঝ বুঝে যায়—
ভালোবাসা মানে কখনও কখনও ছাড়তে পারা।

এই ব্যথা, এই প্রেম, এই অদ্ভুত অনুভব—
এরই নাম কুরবানী।