দিবা গেল এই বুঝি বেলা খুঁজে নিল আঁধারের বুক,
ওহে পিতা, কচ কিন্তু এখনো ফিরলো না ঘরে।
পিতা বলে, থাক্ বাদ দে ওসব, না আসলে না আসুক,
শুনিয়া পিতৃবাণী তুফান বয়ে গেলো দেবযানীর অন্তরে।


লুকায়ে মরমী ব্যথা বলে কন্যা পায়ে ধরি পিতা,
একে তো শরণাগত, তার উপরে শিষ্য তব হয়।
কলঙ্ক রটিবে তোমার ভবেতে যদি জলে কচের চিতা,
শুনিয়া কন্যাবাণী বসিলো ধ্যানে শুক্রাচার্য্য মহাশয়।


চমকে উঠিলো গুরু দেখে শিষ্যের টুকরো টুকরো তনু,
মৃত সঞ্জীবনী মন্ত্রে বাঁচালো শিষ্য অতি যত্ন করি।
'ধন্য পিতা' বলে উল্লাস করিছে কন্যা যেন রত্ন মিলিনু,
দেখিলে কচের মুখ কেবলি মনে হয় সকল সুখ আমারি।


এভাবে প্রেমেতে মজিলো কন্যা নাহি জানে পিতা,
দেবযানী খুৃঁজে পেল পূর্নিমার চাঁদ অন্তর আকাশে।
আলোয় উদ্ভাসিত ক্ষণে তুচ্ছ কে দাতা আর কে গ্রহীতা,
প্রেমের টানে মিনতিগুলো বারে বারে ফিরে আসে।


এভাবে পিতৃস্নেহে বন্দী পিতা বহুবার বাঁচালো শিষ্যকে,
যত্নে শেখালো মন্ত্র শিষ্য যেন সদা করে গুরুর কীর্তন।
সঞ্জীবনী মন্ত্র শিখে কচের বিদায়ক্ষণ উপস্থিত ভূলোকে,
গুরু প্রনমিয়া বাহির হতেই দেবযানীর আত্মনিবেদন।


কচ বলে এসেছি গুরুগৃহে শিক্ষা নিতে প্রেম নিতে নয়,
ভাতৃসম জনের কাছে প্রেম নিবেদন শোভা নাহি পায়।
তুমি আমার গুরুকন্যা ভগ্নিরুপে থাকিবে নিশ্চয়,
হে কন্যা,চঞ্চল মন শান্ত হলে নিশ্চয় পূর্ণ হবে স্নিগ্ধতায়।


এবার অশ্রুজল সকল সুপ্ততা ভেঙে চুরমার করে দিল,
প্রেমেতে ডুবিয়া কন্যার সকল কিছু রসাতলে গেল।
জলন্ত হিয়া অভিশাপে মত্ত হয়ে শীতল হতে চায়,
অভিশাপে প্রেমের নিধন অসম্ভব ভাবের আঙিনায়।