( তখন ফোর্থ ইয়ারে, বিকেলে হলে নিজ রুমে বসে প্রিয় গায়ক জেমসের গান শুনছি। প্রতিদিনই শুনি প্রায়। সেদিন ‘প্রিয় আকাশি’ (https://www.youtube.com/watch?v=RsnU2F2HIGQ) গানটা শুনে কি হলো, লিখলাম ‘অনাকাঙ্খিত চিঠি’। এরও কয়েকমাস পর কালের কন্ঠে পড়লাম প্রিয় আকাশির গীতিকার প্রখ্যাত লতিফুল ইসলাম শিবলীর কলাম (http://www.kalerkantho.com/print_edition/…)। জানলাম ‘প্যারিসের চিঠি’ কিভাবে ‘প্রিয় আকাশি’ হলো।)


হৃদয়নারী আমার!
নিভৃত প্রবাস বাসের এতকাল পর
তোমার চিঠি পেয়েছি আজ!
ভাবিনি এও কখনো সম্ভব।


ভবঘুরে আমার ঠিকানা তোমার পাবার কথা নয়-
কোথায় পেয়েছ লেখনি।
তুমি অনেক কথা বলতে জান, জানতাম
লিখতেও জান, চিঠি না পেলে জানাই হতনা।
তুমি লিখেছ-


পালিয়ে এই শহর ছেড়ে হারিয়ে গিয়েও
তুমি আজও নিজের কাছ থেকে পালাতে পেরেছ কি?
দেড় কোটি মানুষের এই শহরে তুমি নাই
তবুও ভাবি, যেখানে আছ ভাল আছ।


তুমি আজ কতখানি বদলেছ জানিনা?
তোমার প্রিয় শহরটা আর তেমন নেই
ভেতরের জীর্ণতা যাই হোক-
বাইরে তার ছত্রে ছত্রে চোখ ধাধানো জৌলুষ!


এখানকার পার্কগুলো এখন ইউরোপের মতই বেআব্রু!
তোমার প্রিয় নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান সমৃদ্ধ হলেও
পুরনো বইয়ের দোকানের দৈন্য-দশা বলবার মত নয়।
বইমেলা এখন আর জাতীয় শোকের ঐতিহ্য নয়!
পুজিবাদীদের প্রচারণা, আর উৎসব-উল্লাসে ঠাসা।


খুব গর্ব করে তুমি দেশপ্রেমের কথা বলতে
অথচ সাত সমুদ্রের ওপারে তুমি লুকিয়েছন, বাহ দেশপ্রেম।
এই শহরের কথা ভেবে সত্যি কি তোমার চোখ ভিজে উঠেনা?


রাতের ঢাকায় আজকাল তারার দেখা পাওয়া ভার
আলোর প্রাচুর্য্য, যদিও ইমারতের ভিড়ে সভ্যতার নীল অন্ধকার।
কবিরা এখানে অপাংক্তেয়, হাতেগোনা।
প্রকৌশলী, ব্যাংকার, তারকা, আর বড় চাকুরেরা এখন বুদ্ধিজীবী!


তোমার প্রিয় শহরে এখন প্রেমের জন্য
কোন ছেলে দিওয়ানা হয়ে ওঠেনা
প্রেমের নামে সর্বস্ব হারায়েও কোন মেয়ের চোখে জল জমেনা!
পরাজিতের গ্লানি নিয়ে তোমার মত কেউ হারিয়ে যায়না।
এখনকার ঢাকায় সত্যিকারের একজন কবিও নেই
কাকের ও বড় অভাব!


#
আমি কবি বলেই, না হয় কাব্য করতাম
কবির ভালবাসা হয়ে তুমিও বেশ কাব্যিক কথা শিখেছো।
অনেক কিছু তুমি জানতে চেয়েছ
লিখেছ-


ওখানেও কি ঢাকার মত অঝোর বৃষ্টি ঝড়ে?
রাত জেগে এখনও তুমি আমায় নিয়ে অজস্র কবিতা লিখ?
তোমার ঝাকড়া লম্বা চুল এখনও কি যত্নে পাট করা থাকে?
না পাওয়ার ব্যথায় এখনও তোমার চোখ ভিজে ওঠে কি?


এই শহরে ফিরবার সাধ জাগেনা তোমার?
বছরের প্রিয় দিনগুলোতে আমাকে একবার দেখার জন্য
তোমার মনটা উতলা হয়ে ওঠেনা বল?
অপর গোলার্ধেও কি আমায় ভেবে নির্ঘুম রাত পাড়ি দাও?


সচরাচর এখন তোমাকে অনেক বেশি মনে পড়ে-
দু’ যুগ আগে এমনি করে যদি একটিবার আমার ভাবনায় আসতে
তুমি হয়ত পাগলই হয়ে যেতে, তাইনা?
আমার ভাবনায় না আসতে পেরেই তুমি পালালে-
অথচ এখন তোমাকে আমার নিত্য মনে পড়ে!


আমার মতন এক সামান্য নারীর জন্য
একটি সম্ভাবনার মৃত্যু, একটি ট্রাজেডির জন্ম ভেবে
নিজেকে কখনো কখনো অপরাধী মনে হয়।
যদিও জানি তোমার কাছে আমি সবচেয়ে নিরপরাধ।


তবুও হাসি পায়, কি আজব বোকা তুমি
আমি ছিলাম বলেই যে শহরটা তোমার প্রিয় হয়ে উঠেছিল,
আমি আছি বলেই
সে শহরটা তোমার কাছে এখর ধূসর স্বপ্ন মাত্র।


আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই, তোমায় আশা দিইনি,
ভালবাসার ভরসা দিইনি।
এই ঢাকায় বসে তোমার অস্পষ্ট স্মৃতি নিত্য মনে পড়ে
আমার স্বামী, সন্তান, সংসারের স্পষ্টতার ভিড়ে।


তবুও এটুকু জেনো তোমার বড় বন্ধু আমার নেই!
নিজের কথা অনেক বলার ছিল, হল না-
তুমি যত দূরেই থাক, যেভাবেই-
আমাকে তুমি ভিন্ন সম্পূর্ণ উপলদ্ধি করার সাধ্য কারও নেই।


#...............
ঢাকা, ১৬.১০.২০১০ ইং।