সংগ্রামী উপস্থিতি, আপনারা এর আগেও আমাকে বহুবার দেখেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
হাতে জ্বলন্ত সিগারেট, কাঁধে কবিয়াল ব্যাগ আর পড়নে লাল পাঞ্জাবিতে।
চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল আর
কবিতার পাণ্ডুলিপি নিয়ে আমি বহুবার এসেছি টিএসসিতে,
এই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে।


এখানে, এই ঊর্ধমুখি কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায়
এখনো উৎকণ্ঠার ধ্বনিরা ডাকে মিছিলের পথে
স্বপ্নের শিয়রে জেগে থাকা নিদ্রাহীন রাত, অসংখ্য রক্তাক্ত চোখ
আগুনের লেলিহান শিখার মতো জ্বলছে আর জ্বলছে...
যেন প্রতিনিয়ত জানান দিচ্ছে,
ঘনিয়ে আসছে বিপ্লবের উৎসবের দিন।
যেদিন করতলে শেষ বিশ্বাসের শিকড় আঁকড়ে ধরে
মানুষ ফিরে কেরে নেবে মানুষ।
প্রেমিকার নির্বাসিত ধোঁয়াটে চোখ
খরার মাঠে মেলে দেবে ফসলের সোনালি পালক।
সন্নিবিষ্ট তাম্রলিপির মতো প্রজ্জ্বলিত স্বাধীনতা
প্রমিকা ও গণভোট হাতে উল্লাস করবে উন্মাদ শহর
কুয়াশায় ভেজা কাশ বিকেল, কবিতার স্তবক।


শ্রদ্ধেয় সমাবেশ, আপনারা জানেন আমি ক্ষুদিরাম
মাস্টারদা কিংবা প্রীতিলতা মতোই বিদ্রোহী,
আমি বিপ্লবী
আমি নজরুলের মতো কবিতার শহরে আজাদী চাই
আমি সুকান্তের মতো ইনকিলাব চাই
আমি চাই শ্রেণিহীন সাম্যের সমাজ।
তাইতো কবিতায় লিখি প্রেম, দ্রোহ, বিপ্লব আর রসোন্মত্ত যৌবনে বিদ্রোহের শ্লোক।
যে বিদ্রোহ মানুষকে দ্রোহের আগুনে পুড়তে শেখায়
ফিরে কেরে নিতে শেখায় অভাব থেকে আজাদী, অশিক্ষা থেকে আজাদী
শোষণ ও বঞ্চনা থেকে আজাদী।
সামরিক অসামরিক কতৃপক্ষের অযৌক্তিক নির্যাতন থেকে আজাদী।
আমি সেই আজাদীর আজন্ম ধারক-বাহক।


আজ এই মঞ্চে উপবিষ্ট আমার সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা,
আপনারা এর আগেও আমার অসংখ্য কবিতার আবৃত্তি শুনেছেন।
একের পর এক কবিতার পাণ্ডুলিপি পড়েছেন।
হাততালি দিয়ে অভিভূত করেছেন এই মঞ্চে।
কিন্তু বিশ্বাস করুণ বন্ধুগণ,
আমি এসবের কিছুই চাইনি আপনাদের কাছে।
আপনাদের হাততালি, জিন্দাবাদ কিংবা সুশীল তকমার জন্যে কবিতার মঞ্চে উঠিনি আজ।


আমার বক্তব্য একদম সুস্পষ্ট,
আমার চাওয়া খুবি স্বাভাবিক ও সহজলভ্য।
এতকাল যারা ক্ষমতার মসনদে বসে
আমার অসংখ্য ভাই-বোনকে হত্যা করেছে নির্বিচারে।
যারা প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে গড়েছে টাকার পাহাড়
যারা দুঃশাসনে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে দেশ
জনস্রোতের বিপরীতে রাষ্ট্রকে বানিয়েছে কারাগার
আমি সেইসব দুঃশাসনে অবসান চাই!
আসন্ন গণভোটে জনতার বিজয় দেখতে চাই!
আমার দেশের মানুষ দেখতে চায়।


আমি জানি আপনারা আমার সাথেই আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।
যেমন করে জলের সঙ্গে মিশে থাকে দুই অণু হাইড্রোজেন এবং এক অণু অক্সিজেন।
আপনারাও ঠিক তেমনি থাকবেন।
অন্যথায় পুঁজির পদতলে নত করে মাথা
কেটে যাবে সহস্র বছর।
আমরা আরো একবার ফিরে পাবো গোলামির জীবন।


আজ এই একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে
তাবৎ দুনিয়ার উত্তর থেকে দক্ষিণ
পূর্ব থেকে অস্তাচল পশ্চিম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এখনো ভোলেনি মানুষ
এখনো কারো কারো তর্জনী নির্ধারণ করে জীবন কিংবা মৃত্যু।
এখনো ইয়েমেন, সিরিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকার মানুষ মানবেতর।
এখনো বর্ণবাদ, ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রতিমুহূর্তে মানুষে মানুষে গড়ছে বিভাজন।
এখনো শেতাঙ্গদের দাসত্বের কবলে জিম্মি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ।
অগণিত হৃদয় শস্য ফুল রুপকথার নদী ও নারী
চেয়ে আছে মানুষের দিকে, চেয়ে আছে মিছিলের দিকে।


আপনাদের মনে আছে বন্ধুগণ, ভূমধ্যসাগরের উপকূলে
ভেসে আসা আয়লান কুর্দির নিথর দেহের কথা
নাফ নদীতে ভেসে যাওয়া অসংখ্য রোহিঙ্গা শিশুর কথা
সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর কথা। কিংবা
সিরিয়ার সেই তিন বছরের বাচ্চাটির কথা
বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মৃত্যুর পূর্বে
যে বার বার বলেছিলো আমি ঈশ্বরকে সব বলে দেবো
এতদিনে হয়তো সে ঈশ্বরকে সব বলে দিয়েছে
বলে দিয়েছে আমাদের অমানবিকতার কথা
আমাদের পৈশাচিকতার কথা, গণহত্যার কথা
আধুনিক সভ্যতার নামে তৈরি মারণাস্ত্রের কথা।
যে মারণাস্ত্র প্রতি মুহূর্তে স্তব্ধ করে দিচ্ছে
পৃথিবীর গতিপথ
দম্পতির আলৌকিক হাসি, কাথায় জড়ানো শিশুর অসতর্ক চিৎকার।


আমরা আমাদের পৃথিবীকে বিভক্ত করেছি ধর্মের নামে, স্বাধীনতার নামে
জাতি ও জাতীয়তাবাদের নামে, দেশের নামে।
আমরা এতোটা বিভক্ত করেছি যে,
বিভক্ত হতে হতে আজ প্রত্যেকেই একা হয়ে গেছি।
যে একাকীত্বের ভিড়ে জননী ভুলেছে সন্তান
মানুষ ভুলেছে মানুষ, মনুষ্যত্ব।
মানুষের মৃত্যুতে এখন আর মানুষ কাঁদে না
যে যার মতো নিঃশব্দে চলে যায় ঘরে।
কিন্তু কেন?
কেন এই নিশ্চুপ নীরবতা
নীলাচল অন্ধকারকে আলো ভেবে কুর্নিশ করা?
আমি বুঝি না বুঝি না বুঝি না।


আমি কবি রাজনীতিবিদ কিংবা
সুশীল বুদ্ধিজীবী হতে আসিনি আপনাদের কাছে।
আমি শুধু আপনাদের বিবেককে নাড়া দিতে এসেছি
আপনাদের না বলা কথাকে ঊর্ধ্ব গগনে তুলে ধরতে এসেছি
এসেছি মুষ্টিবদ্ধ হাতে শোষকের ভিত কাঁপাতে।
যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে অনিবার্য শ্রেণিসংগ্রাম।
হাজার বছরের বিষাক্ত মৃত্যুসিক্ত জীবনের ছাপ।
ইতিহাস নির্ধারিত এই লড়াইয়ে আপনারা কোন পক্ষে আছেন?


আমি মানুষের পক্ষে, মানুষের জন্যে।
মানুষের পক্ষে থেকে যখনি এ কথা বলতে চাই,
আমাকে বলা হয় তুমি বিচ্ছিন্নতাবাদী, তুমি বিশৃঙ্খলাকারি।
আইন অমান্যের অভিযোগে আমাকে রাস্তায় ফেলে
রক্তাক্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পেটোয়া বাহিনী।
তারা আমাকে ধরে নিয়ে যায়
ঢুকিয়ে দেয় অন্ধকার কনডেম সেলে।
জিগ্যাসাবাদের নামে অমানুষিক নির্যাতনে
হত্যা করতে চায় আমাকে
কিন্তু বিশ্বাস করুণ বন্ধুগণ, আমি আইন অমান্যকারী নাই
আমি বিচ্ছিন্নতাবাদী নই
আমি একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক।


এখনো বিনয় করে বলছি-
একবার ভাবুন সেইসব কিংবদন্তিদের কথা
আপনার আমার পূর্বপুরুষদের কথা
যাঁদের তীক্ষ্ণ আঁখি কোণে শৃঙ্খল মুক্তির স্বপ্ন ছিলো
হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দনে বিপ্লবের হুংকার ছিলো
যাঁরা শেষ নিশ্বাস অবধি বলে গেছেন সাম্যের কথা
বিমূর্ত ঈশ্বরের চেয়ে মূর্তিমান মানুষের কথা
অসমাপ্ত যুদ্ধের টানা ইতিবৃত্তের কথা
একটি মুষ্টিবদ্ধ মিছিলের শেষ ভাষণে জ্বেলে দেওয়া আগুনের কথা।
আমরা কি সেইসব বীর শহীদদের পক্ষ অবলম্বন করছি?
খোলা তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়েছি ন্যায় নীতির পক্ষে?
আমি জানি এর কোনো উত্তর আপনাদের জানা নেই।
তবুও বলছি বন্ধুগণ; অনাদিকাল থেকে মানুষ যে
কথা উচ্চারণ করে আসছে শোষণের বিরুদ্ধে।
যে কথা আপনার
যে কথা আমার
যে কথা আমাদের সকলের
আমি সেই আজ কথাই আপনাদের মাঝে বলতে এসেছি।
আপনার আমার কথা বোঝেন না।
আপনারা জানেন শুধু হাততালি দিতে, উল্লাস করতে। আর
ভোটের সময় চকচকে পোশাকে লাইন ধরে ভোট দিতে।
ইদানিং তো দেখছি ভোটটিও চুরি হয়ে যায় আগের দিন রাতে।
অথচ চেয়ে দেখুন বন্ধুগণ, আপনাদের এই ভোট
বস্তুত আপনাদের কোনো কাজেই আসে না।
আপনাদের ছেলেরা এখনো নিরক্ষর
এখনো কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ।
প্রতিমুহূর্তে যাকে নিয়ে যাচ্ছে পশ্চাতপদতার দিকে।
আদিম হিংস্র মানবিকতার দিকে।


আপনারা আমার কথা বোঝেন না।
আপনারা ভাঙতে চান না এই জরাজীর্ণ সমাজব্যবস্থাকে
যে ব্যবস্থার উপর ভরসা করে একের পর এক
দেউলিয়া হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো
চুরি হয়ে যাচ্ছে আপনার আমার গচ্ছিত টাকা
ব্যাংক, বীমা কর্পোরেশন, আন্ডার ডেভেলাম্পমেন্ট কনস্ট্রাকশন
শোভিত উদ্যান, সরকারি অফিস-আদালত।
তবু কোন বিশ্বাসে এখনো বসে আছেন ঘরে
নারী সঙ্গমে কাটাচ্ছেন যৌবনের সবটা সকাল।
আমি বুঝি না, বুঝি না, বুঝি না।


আপনাদের মনে আছে বন্ধুগণ, সদ্য স্বাধীন দেশে
সর্বপ্রথম ছাত্রদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিলো কারা
কারা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মিছিলে মতিউল ও কাদেরকে হত্যা করেছিলো।
কারা পচাত্তরের পনেরো আগস্ট জাতিকে পিতৃহীন করেছিলো।
দেশকে আবারও পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কারা।
ক্যান্টনমেন্টর কোন অফিসারদের সুবিধার্থে খুন হয়েছে
হাজার সিরাজ, হাজার তাহের, হাজার তাজুল ইসলাম।
আমি জানি আপনার ইতিহাসের সব ঘটনাই জানেন
আপনার এও জানেন নূর হোসেনের গণতন্ত্র আজ কোথায়।
কাদের সুবিধার্থে রচিত হয়েছে সমাজতন্ত্রের কবর।
তবু কোন বিশ্বাসে এই মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিশ্বাস করেন, ভরষা করেন।
আমি বুঝি না, বুঝি না, বুঝি না।


আপনারা কি প্রশ্ন করতে ভুলে গেছেন?
আপনারা কি ভুলে গেছেন কিভাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে হয়
কিভাবে জবাবদিহিতার মধ্যে দাঁড় করাতে হয় ক্ষমতা মসনদে থাকা ওই নরপিশাচকে।
কিভাবে মানুষের অধিকারকে রুপ দিতে হয় গণআন্দোলনে।
হত্যাকারীর পরিচালিত বিচারালয়ে কিভাবে লড়তে ন্যায় নীতির পক্ষে।
আমি বুঝি না, বুঝি না, বুঝি না।


চেয়ে দেখুন বন্ধুগণ, বাংলার আকাশে আজ দূর্বিষহ কালো ছায়া
এখানে কবিরা ভুলেছে বিদ্রোহের শ্লোক
রাখাল ভুলেছে অনুপম বাঁশি।
তথাকথিত গাড়ল বুদ্ধিজীবীও ভুলেছেন নৈতিকতা শেষ চিহ্নটুকু।
যেন ঘোর অমানিশার মাঝে ডুবে যাচ্ছে স্বাধীনতার ঔজ্জ্বল্য।
মিছিলে, স্লোগানে, ভাষণে আজ শুধু একটাই দাবি
মানুষকে বাঁচতে দাও!
বাঁচার মতো বাঁচতে দাও!
যদি শাসকদের ব্যারিকেডে বাঁধা পরে কবিতার আন্দোলন
যদি গ্রহণের অন্ধকারে ফিসফিস করে নিভে যায়
আরও একটি উজ্জ্বল তারকাপুঞ্জ
যদি বিচারবহির্ভূত ভাবে আর একটি মানুষকেও হত্যা করা হয় বাংলাদেশে।
আমি কবিতার পাণ্ডুলিপি ছুঁয়ে শপথ করছি,
প্রতিঘাত করতে কখনো হবো না পিছু।
প্রতিবাদ প্রতিরোধে ফুলকার মতো জ্বলে উঠবে কবিতা।


কবিতা কোনো আইনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ নয়
কবিতা আসীম, কবিতা যুদ্ধবাজ প্রেমিকের মতোই সশস্ত্র।
কবিতা মৃত্তিকার গভীরে বুনে পরিচ্ছন্ন বীজ
বিক্ষুব্ধ তরুণের বিদ্রোহী কোরাসে খুঁজে উর্বর সাহিত্য ভূমি।
গেরিলা ছন্দে জ্বলে উঠে দল মাদল
যেন পরাভবহীন নির্ভীক সৈনিক।


আজ এই কবিতার মঞ্চে যারা উপস্থিত আছেন,
যারা দূর থেকে শুনছেন
আপনারা এই সমাজে শিক্ষিত, মার্জিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত।
আপনারা শুধু শিক্ষা বলতে বোঝেন বস্তা বস্তা সার্টিফিকেট
নাম, জশ, খ্যাতি আর সাফল্যের উচ্চ শেখর।
কিন্তু বিশ্বাস করুণ বন্ধুগণ, নাম, জশ, খ্যাতি আর
নারী প্রেমে ডুবে থাকাই শিক্ষা নয়।
শিক্ষা সম্পূর্ণ আলাদা, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মূল্যবোধের নাম।
যে মূল্যবোধ মানুষকে মানুষ হতে শেখায়
মানুষের কথা বলতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়।
যদি এই চিরন্তন সত্য কথাটি বোঝেন
যদি বোঝেন ও মানুষের পক্ষে উচ্চারণ করেন
তো আপনি অসংখ্য মিছিলের অস্পষ্ট নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করতে বাধ্য হবেন।
কেননা এই শহরে অসংখ্য মানুষ এখনো ফুটপাতে ঘুমায়
ওরা এখনো মানুষ নয়, মানবেতর।
কিছু মানুষের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে দিন পার করে ওরা।
অথচ একবার প্রশ্ন করুণ নিজের বিবেকের কাছে
এই আপনাদের মধ্য থেকে কিংবা সমাজের ধনাঢ্য
দশতলা বাড়িওয়ালা ভূস্বামীদের মধ্য থেকে কত পারসেন্ট যুদ্ধে গিয়েছিলেন সেদিন।
যেদিন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হুকুমে লক্ষ লক্ষ
নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো।
যেদিন ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেছিলো আমি পূর্ব বঙ্গের মানুষ চাই না, মাটি চাই।
সেদিন এই আপনারা,
এই আপনাদের পূর্বসূরিরা কোথায় ছিলেন?


আমি শেষ বারের মতো বলছি, আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে
গতকাল অবধি যে গাছটাকে আমরা আমাদের আশ্রয়স্থল ভেবেছিলাম, সেটা শেকড়হীন।
মৃত্তিকার সমর্থন থেকে ছিটকে হাওয়ায় ভাসছে আর ভাসছে
যেন প্রতিমুহূর্তে নিয়ে যাচ্ছে পশ্চাতপদতার দিকে।
আদিম হিংস্র মানবিকতার দিকে।


স্মরণকালের এই অহিংস কবিতার আন্দোলন থেকে
যদি ছিন্নমূল মানুষেরা আহারের নিশ্চয়তা পায়
যদি ওই ভূমিহীন কৃষক ফসলের ন্যায্যতা পায়
যদি পাগল প্রেমিক ভালোবেসে ফিরে আসে নীড়ে
তবে কথা দিলাম, আমি আর লিখবো না কোনো বিদ্রোহী কবিতা।
প্রকৃতি, প্রেম, নদী ও নারীর কথায় ভরে উঠবে কবিতার স্তবক।
অন্যথায়, আমি আমার কবিতার এক একটা শব্দে
অযুত তারকাপুঞ্জের মতো মশাল বানাবো।
যে মশাল অসংখ্য মিছিলের অস্পষ্ট নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করবে একদিন।
ভালোবাসার কাছে ভালোবাসা চেয়ে নত হবে উদ্দাম আনন্দে
সমবেত ব্যথিত মানুষগুলোর সাথে নেমে আসবে রাজপথে।
কবিতার অসংখ্য স্তবক ফুলকার মতো জ্বলে উঠবে স্বৈরাচারের গদিতে।
ভিনদেশের কবিরাও সামিল হবে এই মিছিলে।


যে শিশু কোনোদিনও সমুদ্র দেখেনি
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে
তাকেও আসতে হবে জনসমুদ্রের মিছিলে
বিপ্লবের উৎসবের খোঁজে।


আজ এই মঞ্চে উচ্চারিত প্রতিটা শব্দের প্রতিধ্বনিতে
প্রবাল দীপের মতো আদিবাসী গ্রামগুলোর ভেঙে যাক নীরবতা
সাঙ্গ আইনের সাইরেন বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে
তৃষ্ণার্ত চোখ জ্বলে উঠুক সুর্যের মতো।
বিষাক্ত মৃত্যুসিক্ত লাল নীল রক্তের ছাপ ধারালো চাবুকের মতো আঘাত হানুক শাসকদের মসনদে।
কবিতার এই মঞ্চ থেকে আইনসভার দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হোক,"দূর হ তুই দুঃশাসন"।


অবশেষে আকাশে শান্তি, বাতাসে শান্তি
শান্তি বর্ষিত হোক ধরায়।