একদিন শহরের কোলাহল ছেড়ে
আমি হেঁটে গেছি অনেক দূরে,
পেছনে পড়ে রইলো ধোঁয়ায় ঢাকা আকাশ,
নির্বাক অট্টালিকার বিষাদময় দীর্ঘশ্বাস।
পথের ধারে কেউ ডাকলো আমায়—
এক ভিক্ষুক বৃদ্ধ, যার চোখে শূন্যতার অনুরণন,
ক্ষুধার্ত শিশুদের নীলাভ ঠোঁট,
নাবিকের করুণ স্বরে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের আর্তনাদ—
কিন্তু আমি শুনিনি, আমি থামিনি,
একবিন্দু।
আমি মৃত শহরের বুকে দাঁড়িয়ে নীরবে
খোলা আকাশের দিকে চেয়ে দেখেছি,
সেখানে প্রতিশ্রুতির কান্না জমেছে মেঘ হয়ে,
আঁধারের মেঘ,
যে মেঘ কখনো বৃষ্টি হয়ে নামে না,
শুধু পোড়ায়, শুধু দগ্ধ করে।
তবু সে আমাকে রুখতে পারেনি।
আমি এগিয়ে গেছি খরা-বন্যার সীমারেখায়,
যেখানে মৃত নদীর বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে ফাটল,
যেখানে জলোচ্ছ্বাসের গর্জনেও
দুর্ভিক্ষের কান্না চাপা পড়ে যায়।
আমি যে সত্য লিখতে চেয়েছি বারেবারে,
তা আসলে সত্য নয়,
নয়কো তা শুদ্ধতার শান্ত্যুদক।
আমি লিখেছি শব্দ দিয়ে,
কিন্তু শব্দ তো কেবল প্রতিধ্বনি ধরে রাখে,
যন্ত্রণা নয়।
আমি বহিরঙ্গের রামধনুর বিচ্ছুরণে
আমার ভেতরের অন্ধকারকে চিহ্নিত করতে পারিনি,
বাহ্যিক রঙের উচ্ছ্বাসে ঢাকা পড়ে গিয়েছে
আমার ক্ষয়ে যাওয়া সত্তার ফাটলগুলো।
তবু আজ, এই নিঃসঙ্গ প্রান্তরে দাঁড়িয়ে,
আমি উপলব্ধি করেছি—
আমার ভেতরেই লুকিয়ে ছিল এক নগর,
যেখানে স্বপ্নেরা জন্মেই মরে যায়,
যেখানে প্রতিশ্রুতিগুলো বৃষ্টি হয়ে নামে না,
শুধু ছাই হয়ে উড়ে যায় বাতাসে।
আমি এখনো হেঁটে চলেছি,
নির্বাসনের পথে,
সত্যের অন্বেষণে,
সময়ের স্রোতে বালির প্রাচীর ভেঙে পড়বে,
স্মৃতির ঢেউয়ে শব্দেরা হারিয়ে যাবে সমুদ্রের তলানিতে,
তবু আমি চলতে থাকব,
আমি খুঁজে যাবো সেই দিগন্তরেখা,
যেখানে রাত্রির বুক চিরে প্রথম আলো ফোটে,
আর অন্ধকারও শিখে নেয় আলোর ভাষা।