কাহিনী কবিতা
পাঁচ টাকা


নরেশ পাটঘরা
ছেলেটা সকাল থেকে রক্ত বমি করছে
যাওনা একবার ডাক্তারের কাছে!
বোলে কাঁদতে থাকে
     নিতাই বাগদির বৌ।


নিতাই বারান্দার এক কোনে বসে
চুপচাপ গামছায় চোখ মোছে
     আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে।


নিতাই বাগদির বৌ এবার
    স্বামীর পায়ের কাছে আছাড় খেয়ে পোড়ে
কাঁদতে কাঁদতে বলে
      যাও না ডাক্তার আনতে।
নিতাই আস্তে আস্তে উঠে
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বৌকে বলে,
তুই ছেলেটার পাশে বোস
আমি ডাক্তার ডেকে আনছি।


নিতাই বাগদির বৌ
নিতায়ের হাতে ছেঁড়া পাঁচ টাকার
একখানা নোট গুঁজে দিয়ে বলে,
তুমি ডাক্তার বাবুর হাতে পায়ে ধরে বলবে,
আমরা গা গতরে খেটে যা পয়সা হয়
সব শোধ করে দেব।


এখন এই পাঁচ টাকা নিয়ে
ডাক্তার বাবু যেন আমাদের
ছেলেকে দেখে যায়।
.....তুমি বুঝিয়ে বোলো
যাও তাড়াতাড়ি যাও।


এই দেখ আবার রক্ত বমি করছে!
নিতাই হাতে পাঁচ টাকা নিয়ে
উর্দ্ধমুখে ছুটল ডাক্তার বাবুর বাড়ির দিকে।


বেলা বাড়তে থাকে
নিতাই তখনো ফেরে না।
ছেলেটা ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়ে।
মা বুক ফাটা কান্নায়
একবার এ ঘর একবার ও ঘর
ছুটোছুটি করতে থাকে।
বিকেল গড়িয়ে আসে
ছেলেটার দম আটকে আসতে থাকে।
মা পাথরের মত বসে থাকে
   তখনো নিতাই ফেরে না।


নিতাইয়ের বৌ এবার ছেলেকে কোলে নিয়ে গায়,
“ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি
মোদের বাড়ি এসো
খাট নেই পলঙ্ক নেই
চৌকি পেতে বসো”।
.....ছেলে ঘুমিয়ে পড়ে।


রাত নামে।
নিতাই ফিরে আসে।
পাঁচ টাকার খাটিয়া মাথায় করে,
ছেলেটাকে নরম খাটিয়ায়
ফুল চন্দনে শোয়াবে বলে।


নিতাই ধীরে ধীরে ছেলের গালে
দু’টো চুমু খেয়ে বলে,
“খোকা আর কি কোনো যন্ত্রণা হচ্ছে?
দেখবি,আর কোনো দিন খিদে পাবে না
যন্ত্রণা হবে না!রক্ত বমি হবে না!
আমি তোর হতভাগ্য বাবা বলছি রে খোকা!
এবার নে শুয়ে পড়! নরম খাটিয়ায়!


আমি গান গাইছি তুই ঘমা
“হরি বোল হরি-হরি বোল হরি-হরি বোল হরি-