আমার একটা ক্লাস ফাইভ ছিলো,
ফোর থেকে যখন ফাইভ এ উঠেছিলাম তখন নতুন এগারোজন ছাত্র এসেছিলো পাশের গ্রামের
বেশ কিছু দিনের মাঝে বন্ধু হয়ে গেলো সবে, তবে আতাউর ছাড়া
ও একটু অন্যরকম
চুপ-চাপ ক্লাসে আসে আর যায়, শুধুই নীরবতায় চলছে ওর দিন।
আমিতো ছিলাম বড্ড বদমাইশ, খেলাধুলায় দুষ্টুমিতে ও আড্ডায়
শুধু আমি একা নয় ছিল আমাদের বড় একটা দল, সাথে মেয়েও ছিল বেশ


তখন খুব পড়েছিলো গরম, আমাদের আছে কি শরম
ক্লাসের মাঝে খালি গাঁয়ে বসে থাকায় মেডাম আপায় আর আসেনি
কারেন্ট ছিলোনা তাই দোষের বদলে ছিল অজুহাতের ভাণ্ডার
ইচ্ছেটা ছিল খেলতে যাবো ফাঁকি দিবো পড়া, কি আর করা
স্যার ও ছিলো আরও বেশি চালু, গাছের তলায় ছায়া ও বাতাস
ফাঁকির কি আর উপায় থাকে, প্রথমেই আমাকে ডাকে
তোমার নাম কি, কোন গ্রামে থাকো?
তোমার বাবা কি করে?
প্রশ্নের এমন কিছু উত্তর আজও কেউ ভুলতে পারেনি যা আর বলা যাবে না
জাগগে ওসব, তার পর আরও ছয় জন পর আসলো আতাউর এর পালা
এই যা এখন কি ঘটে, কি কথাই না পুরো ইস্কুলে রটে
তোমার নাম কি বাবা প্রশ্নের উত্তরে নাম আতাউর, গ্রামের নাম মোহাম্মাদ মাধবপুর
হা হা হা, হা হা হা, হা হা হা
একে একে সকলে হেসে সাবার তবুও প্রশ্ন আবার
বাবা তুমি ঠিক করে বলো গ্রামের নাম কি ?
গ্রাম মোহাম্মাদ মাধবপুর, এটাই নাম গ্রামের
----------------------------!


অনেক অনেক হাসির কাণ্ডে একা লজ্জিত আতাউর একটুও করেনি মন খারাপ
এমন ভাব নিলো সে ছাড়া সকলেই পাগল
হয়তো তখন ভাবেনি তার মতো করে, এমনও হতে পারে।
হাসি খুশি চলে যায় ফিরে বাড়িতে
তার পর গ্রীষ্মের ছুটি পুরো একমাস


আতাউর গ্রীষ্মের ছুটির পর আর ফিরে আসেনি, খোঁজ নিয়ে দেখলাম সে আর হাসেনি
সাত বিঘা জমি, বাড়ির যত গাছ আর সাধের বানানো ঘর
বাবা করেছে বিলীন শুধু চিকিৎসা ব্যায়ে, ছনের ছাপরায় এখন থাকে।
সে ডাকে আয় আয় তি তি, আমার সাথে খেলবে নাকি?
চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না, অন্তরে শুধু গভীর কান্না।
কেন হয়েছে আর প্রশ্ন করতে হয়নি, মায়ের আহাজারি একটুও থামেনি
আমার ছেলে আজ শিশুর চেয়েও অধম, জ্ঞান ধ্যান হারিয়ে ফেলেছে
বোঝার শক্তিও নেই, দেখো বাবা তোমাদের চিনতেও পারবে না।


সেই থেকে আজও সে ওভাবেই বেঁচে আছে, দোষটা কার!
আমার, আমাদের না ওর নিজের
ব্রেনে আঘাত পেয়ে যে পরিণতি হয়েছে তা আজও ভুলতে পারি না
পরের ক্ষেতের ছোলা, আম, নারিকেল আর পেড়েও খাই না
নিস্তব্ধ হয়ে যে গেছি আমরাও
আমাদের এমন আচারন পরিবারও চিন্তিত হয়ে পড়েছে, কি হয়েছে?
এখন ও কেমন আছে, কোথায় আছে বা বেঁচে আছে কি?
প্রশ্নটা অন্তরে তীরের মতো এসে লাগে