আগমনী
------------
ঘুমন্ত শহরে একদিন !
ত্বরিত আলো পড়েছিল আমার চোখের পরে।
বসন্ত বাতাসের আগমনী ডাক,
ফলার মতো বিঁধল কানে।
আধো ঘুম, আধো জাগরন,
তন্দ্রায় কিশোরীর ওড়না চুমে,
চোখে, মুখে, গ্রীবার কাছে।
নিঃশ্বাসে উষ্ণতা গুঁজে  সুনসান নিরবতা ভাঙ্গে।
শীতনিদ্রায় কেটে গেছে জীবনের অনেকটা কাল।
আলোর মিছিল মুখের জমিনে হেঁটেছে,
আলোড়িত আন্দোলনে।
ঘুম ভাঙ্গলেও ঘুমের ঘোর ভাঙ্গেনি তখনও আমার !
এক চোখ আধো খোলা, এক চোখ বন্ধ !
আধমেলা চোখ দিয়ে ঢোকা আলো,
ভিমরুলের হুল ফোটায় শরীরে।


মানবী !  
তোমার কি অন্ধকারে বিশ্বাস নেই ?
অন্ধকারের আলো কি তোমার চোখে পড়ে না ?
অন্ধকারের আলোয় কি তুমি জগৎ দেখতে পাও না ?
অন্ধকারের মতো নিবিড় ভাবে,
মিশতে পারো কি তুমি দেহের সকল কোষে ?
হাজার রহস্য তোমার চোখের তারায়।
বিশ্বাসী মন অবিশ্বাসী চোখের গহীনে,
পেন্ডুলামে দুলছে যেন পরিচিত বাতাসে।
এখানে বহুদিন বহুবার ক্ষীণ হয়েছে নুপুরের শব্দ।
ঝরা পাতার মরমর শব্দ,
হেটে গিয়ে নিঃশেষ হয়েছে স্বেচ্ছায় অনেকবার !
তোমার চোখে মুখে প্রত্যয় দেখেছি ক্ষণিক পরেই !
বন্ধ দুয়ারে দেখেছি বিশ্বাসী পা !
সপাট আঘাতে আমার ঘরের খিলান পড়েছে মাটিতে।
দরজার চৌকাঠে সরল বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে তোমার মূর্তি !
আমি জাগলেও আমার অন্তর ছিলো ঘুমিয়ে!
হাজার বছরের অবিশ্বাসের চাবুকে,
অবসন্ন ছিলো মন আমার !
তোমার নিঃশ্বাসে উজ্জীবনী শক্তি,
অন্ধকারে কেমন করে জাগায় অন্তরাত্মা !  
কালের কপট আচারে ঢেকেছিল,
আমার সকল ইন্দ্রীয় - কালো কাপড়ে।
এখন বসন্ত আগত দ্বারে।
যে চোখ মুদেছিলো ভীষণ অভিমানে, আক্রোশে,
সে চোখে জোনাকির পিটপিটে দিনরাত !
যে হাত বন্ধন খুলে নিস্তেজ পড়েছিলো মাটিতে,
সে হাত এখন উঠে দাঁড়িয়েছে পায়ের পরে।
যে হৃদয়ে স্পন্দন থেমেছে শঠের কপট বিষে,
সে হৃদয়ে বাসন্তী হাওয়া ফিরেছে
সিঁথির পরিপাটি পথ ধরে।


মানবী !
তোমার অবিচল বিশ্বাসে,
দৃঢ় হাতে ধরো আমার ভগ্নহৃদয় !
রক্তাক্ত হৃদয় আমার লাল টিপ করে নাও,
তোমার বিস্তীর্ণ সবুজ হৃদয়ে।
কালের রথযাত্রা শুরু হোক আজ এখান থেকেই,
একটি গতকালের বিদায় থেকে!