পুরোনো বন্দরের কুয়াশা উড়িয়ে,
জীবন ভিড়েছে নতুন এক বন্দরে,
এক নতুন প্রভাতে।
এখানে ভোরের পসরা বসে সূর্য উঠার আগেই।
স্টেশনে, ঘাটে, রাজপথে, পথিকের নিরিবিলি পথচলা।
পাখিদের কূজন এখানে ভোরের সুর লহরী।
স্বাগতম জানাতে পথের দু'প্রান্তে,
অপেক্ষার মিছিল ছিল সেদিন।
আমি সেই মিছিল দেখেছি বিস্ময় নিয়ে!
এক জোড়া চোখ পড়েছে আমার চোখের পরে।
এক জনমের অপেক্ষা নিয়ে,
এক জনমের কথা নিয়ে,
এক জনমের বিরহ নিয়ে।
চোখের মধ্যে বর্ষার জলে -
জলকেলি করা হাঁসেদের উচ্ছ্বাস ছিলো।
এক একটা চোখ ছিলো এক একটা দিঘি!
স্বচ্ছ সলিলা সেই দীঘিতে , আমার চোখ ডুবেছিলো,
আমার মন ভিজেছিলো।
দীঘির জলের আয়োজন ছিলো আমাকে ঘিরেই।
রহস্যের আগল খুলে খুলে যতই সামনে এগিয়েছি আমি,
ততই বিস্ময় ঘিরে ধরেছে আমাকে!
আমার যেখানে বিস্ময় শুরু,
সেখানে আর বিস্ময়ের ছিলো শেষ প্রান্ত।
আমি ছিলাম, সোনার পাথর বাটিতে যেচে নেয়া এক রাজহংস।
আমার মুখে স্পর্শ লেগেছিলো, আমার ঘুমের ঘোরে।
আমায় দেখা হয়েছিলো মনের নিবিষ্ট চোখ দিয়ে।
দেখা হয়েছিলো, নিজের মাঝে আমাকে আড়াল করে !
আমার উদ্ভ্রান্ত যাযাবর মন,
যেখানে একটুখানি স্থির আশ্রয় খুঁজছিলো,
সেখানেই তৈরি ছিলো আমার বিশ্ব! মহা বিস্ময়!
আমাদের ক্ষীণতা যখন একটা বিন্দুতে মিলে গেলো,
আমরা তখন হাত ধরে হেটেছি সেখানে।
হেটেছি যুগলবন্দী হয়ে।
হেটেছি বিস্তৃত পথ ধরে, রাজপথ আর  সরু গলি মাড়িয়ে !
শব্দ বানে কখনো আনন্দে গলেছি,
কখনো জ্বলেছি, অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্যে!
ভুল করেছি, ভুল শুধরে আবার গলাগলি করে হেটেছি।
যতটা কাঙ্ক্ষিত ছিলো, তার চেয়ে ঢের বেশী পেয়েছি!
যখন চেয়েছি, তার আগেই পেয়েছি নিবিড় প্রেমে।
বহতা জীবন বয়ে এসেছে, নদীর প্রবাহ ধরে।
বয়ে এসেছে হাজারো রঙ গায়ে লাগিয়ে।
আজ এখানে আমার নোঙ্গর !
জাহাজ, মাস্তুল, সাইরেন,
কালো ধোঁয়া, জীবনের অর্থের উপর,
অর্থহীন কালো এক প্রলেপ লাগিয়েছিলো !
সমুদ্র বিলাসিতা - সে আমার ছিলো না।
এখানে দীঘির জলে, নিজেকে খুঁজে পেয়েছি!
এখানে মনের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে,
একটা ঠিকানা পেয়েছি!
শান্ত নিবিড় বন ছায়ায় - ছোট্ট ঘরখানি,
একটা বিশাল পৃথিবী!
দু'টি প্রাণের প্রাঙ্গণ।
এই পৃথিবীর পথ ধরেই হেটে যাবো আমি,
হেটে যাবো আমরা।
হেটে যাবো অনন্ত কাল ধরে।
বুকের মাঝখানে, এক মুঠো হাত চেপে ধরে!