বুকের ভেতরে নিভৃতেই বাড়ছিলো এক মৃত স্পন্দন।
যে উথাল-পাতাল বাতাস বইছিলো অন্দরে,
তারও উৎসের আগে অকর্ষিত ছিলো সেখানের মাটি।
প্রয়োজন ছিলো না অবিদিত প্রয়োজনের।
শ্বাসের ভেতরে দীর্ঘশ্বাসটাও ছিলো অচেনা।
যখন চিনেছি হৃদয়ের কোমল পলি,
তখন থেকেই মেনেছি তার অপরিহার্যতা।


বারান্দার গ্রীল বেয়ে ঘরে প্রবেশ করেছিলো
জোড়া জোড়া পত্র পল্লবিত গুলঞ্চ লতা।
যেদিন হতে হাতের আঙ্গুল ধরে চিনিয়েছো
সবুজ পাতার শিরা উপশিরায় প্রাণ স্পন্দন,
সেদিন থেকেই নিজেকে রু'য়ে দিয়েছিলাম মাটিতে।


অকর্ষিত জমিনে যত্নের নিড়ানি দিয়েছো।
দৃষ্টির ছায়ায় মাতৃ আদর ঢেলেছো।
দু'বাহুর বপুর খোলে আঁকড়ে ধরেছো আমার শৈশব।
আমার অংকুরিত শিশু প্রেম কোলে রেখেছো।
ঝড়-ঝঞ্ঝা, বিপর্যয় টের পাইনি আঁতুড়ঘরে।
রাত্রির অন্ধকারেও নিজেকে খুঁজতে হয়নি।


আঁধার ঘরে জ্বলা এক আঁধার-মানিক!
রোদের ভেতরে এক ছায়াশিশু!
মেঘের ভেতরে সুপ্ত এক মেঘপুত্র!


একাগ্র সৃষ্টির পথে বিসর্জন বুঝিনি।
নিঃশব্দে আপন ছাঁচে ঢেলেছো গলিত লোহা।
আমার শিশু প্রেম তোমার চোখের মনিতে পুরোনো-
প্রাচীন - বহুকালের জমাট বিশ্বাসের আবরণে।
স্বপ্নের লাল গোলাপ হতে পারিনি হয়তো আভরণে।
বুকের গহীনে টকটকে তাজা রক্তে তবু অভিজাত।
সৌরভে ভূবন জয় করা কৌলিন।
নিঃস্বার্থ, নিবেদিতপ্রাণ - প্রেমে, প্রতিদানে।
বলেছো এর বেশী কিছু চাওয়ার নেই জীবনে।


চোখের সামনে দৃশ্যমান কায়ায়-
অন্তরে দিবানিশি কম্পমান ছায়ায়-
সমগ্রেই সৃষ্টির অহংকার ধরেছো।
বুকের গহীনে অভয় আশ্রম গড়েছো!
তবুও নিদ্রাহীন হারানোর ভয় পোষো মনে।


জেনে গেছি প্রিয়তম মমতা তুমি,
প্রিয়তম শব্দ তুমি, প্রিয়তম অনুষঙ্গ এক তুমিই।
আমার জন্মের আগেই হৃদয়ে তোমার সৃষ্টির উল্লাস।
সেই উল্লাসেই প্রিয়তমা জেনো আমার - অনন্ত বসবাস।