শুধুগুণ্ডামি, ভণ্ডামি আর গোঁড়ামি ধর্ম নয়,
এই গোঁড়াদের সর্বশাস্ত্রে শয়তানি চেলা কয়।
এক সে স্রষ্টা সব সৃষ্টির এক সে পরম প্রভু,
একের অধিক স্রষ্টা কোনো সে ধর্ম কহে না কভু।
তবু অজ্ঞানে যদি শয়তানে শরিকি স্বত্ব আনে,
তার বিচারক এক সে আল্লা –লিখিত আল-কোরানে।
মানুষ তাহার বিচার করিতে পারে না, নরকে তারে
অথবা স্বর্গে কোন মানুষের শক্তি পাঠাতে পারে?
‘উপদেশ শুধু দিবে অজ্ঞানে’ – আল্লার সে হুকুম,
নিষেধ কোরানে – বিধর্মীপরে করিতে কোনো জুলুম।
কেন পাপ করে, ভুল পথে যায় মানবজন্ম লয়ে,
কেন আসে এই ধরাতে জন্ম-অন্ধ পঙ্গু হয়ে,
কেন কেহ হয় চিরদরিদ্র, কেহ চিরধনী হয়,
কেন কেউ অভিশপ্ত, কাহারও জীবন শান্তিময়?
কোন শাস্ত্রী বা মৌলানা বলো, জেনেছে তাহার ভেদ?
গাধার মতন বয়েছে ইহারা শাস্ত্র কোরান বেদ!


জীবনে যে তাঁরে ডাকেনিকো, প্রভু ক্ষুধার অন্ন তার
কখনো বন্ধ করেননি কেন, কে করে তার বিচার?
তাঁর সৃষ্টির উদার আকাশ সকলেরে থাকে ঘিরে,
তাঁর বায়ু মসজিদে মন্দিরে সকলের ঘরে ফিরে।
তাঁহার চন্দ্র সূর্যের আলো করে না ধর্ম ভেদ,
সর্বজাতির ঘরে আসে, কই আনে না তো বিচ্ছেদ!
তাঁর মেঘবারি সব ধর্মীর মাঠে ঘাটে ঘরে ঝরে,
তাঁহার অগ্নি জ্বলে, বায়ু বহে সকলেরে সেবা করে।
তাঁর মৃত্তিকা ফল ফুল দেয় সর্বজাতির মাঠে,
কে করে প্রচার বিদ্বেষ তবু তাঁর এ প্রেমের হাটে?
কোনো ‘ওলি’ কোনো দরবেশ যোগী কোনো পয়গম্বর,
অন্য ধর্মে, দেয়নিকো গালি, – কে রাখে তার খবর?
যাহারা গুণ্ডা, ভণ্ড, তারাই ধর্মের আবরণে
স্বার্থের লোভে খ্যাপাইয়া তোলে অজ্ঞান জনগণে।
জাতিতে জাতিতে ধর্মে ধর্মে বিদ্বেষ এরা আনি
আপনার পেট ভরায়, তখ্‌ত চায় এরা শয়তানি।
ধর্ম-আন্দোলনের ছদ্মবেশে এরা কুৎসিত,
বলে এরা, হয়ে মন্ত্রী, করিবে স্বধর্মীদের হিত।
এরা জমিদার মহাজন ধনী নওয়াবি খেতাব পায়,
কারও কল্যাণ চাহে না ইহারা, নিজ কল্যাণ চায়।
ধনসম্পদ এত ইহাদের, করেছে কি কভু দান?
আশ্রয় দেয় গরিবে কি কভু এদের ঘর দালান?
ধর্ম জাতির নাম লয়ে এরা বিষাক্ত করে দেশ,
এরা বিষাক্ত সাপ, ইহাদেরে মেরে করো সব শেষ।
নাই পরমত-সহিষ্ণুতা সে কভু নহে ধার্মিক,
এরা রাক্ষস-গোষ্ঠী ভীষণ অসুর-দৈত্যাধিক।
উৎপীড়ন যে করে, নাই তার কোনো ধর্ম ও জাতি,
জ্যোতির্ময়েরে আড়াল করেছে, এরা আঁধারের সাথি!
মানবে মানবে আনে বিদ্বেষ, কলহ ও হানাহানি,
ইহারা দানব, কেড়ে খায় সব মানবের দানাপানি।
এই আক্ষেপ জেনো তাহাদের মৃত্যুর যন্ত্রণা,
মরণের আগে হতেছে তাদের দুর্গতি লাঞ্ছনা।
এক সে পরম বিচারক, তাঁর শরিক কেহই নাই,
কাহারে শাস্তি দেন তিনি, দেখো দুদিন পরে তা ভাই!
মোরা দরিদ্র কাঙাল নির্যাতিত ও সর্বহারা,
মোদের ভ্রান্ত দ্বন্দ্বের পথে নিতে চায় আজ যারা
আনে অশান্তি উৎপাত আর খোঁজে স্বার্থের দাঁও,
কোরানে আল্লা এদেরই কন – ‘শাখা-মৃগ হয়ে যাও।’


  (শেষ সওগাত কাব্যগ্রন্থ)