বোনের বিয়ে
------------------
--------নজরুল ইসলাম খান


আঠারো বছর একসঙ্গে থেকেছে, আমাদের ছোট বোন।
সবচেয়ে বড় সত্যটি, আজকে তাহার বিয়ে।
সন্মুখে তাহার অজানা এক নতুন জীবন,
হাসি-কান্না, চাওয়া-নাপাওয়া, জয়-পরাজয় নিয়ে ।
বধু বেশে ঘোমটা দিয়ে নয়ন দুটি চেপে ,
হিসাব করছে মহা হিসাব, জীবনের সন্ধিক্ষণে ।
হিসাব মিলছে না বারবার তাই বুক উঠছে কেঁপে,  
আদি-অন্ত হিসাবটা তার ভিড় করছে মনে ।
মন মাঝি তার বৈঠা ধরছে যতই শক্ত করে ,
ততই যেন পিছলে যাচ্ছে বারবার হাত থেকে ।
হৃদয় সাগরে  কাল বোশেখীর যেন দুরন্ত ঝড়ে ,
তীর খুঁজছে ভাবনা তরঙ্গে  হারিয়ে নিজেকে ।
এত টুকু মনে এত ভাবনা জড়িয়ে ধরেছে তারে,
কালকের সেই পুতুল খেলার আমার ছোট বোন ।
প্রসারিত আজ আঁচল তাহার পরের সংসারে,
মায়ের আঁচলে এতদিন যে ঢাকা ছিল সর্বক্ষণ ।
নিজের ভার নিজেই যে বহিতে না পারে ,
সে ই যেতেছে অপরের ভার বহিতে মাথা পেতে ।
নিজেই যে নিজের দায়িত্ব শেখেনি ভাল করে ,
সেই যেতেছে অপরকে দায়িত্ব শেখাতে ।
আজকে থেকে থেমে যাবে তার সব চঞ্চলতা ,
দুরন্তপনা, উচ্ছলতা, কিশোরী সরলতা।
ফুটবে না আর খইয়ের মত মুখ থেকে হাজার কথা,
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চোখের সামনে তার ঘটা।
কাঁদবে না আর মুখ ফুলিয়ে মায়ের গলা ধরে ,
চুল ধরেছে, চড় মেরেছে, বকেছে কেউ তারে ।
ধরবে না আর বায়না সে পুতুল কেনার তরে ,
হবে সে নিদারুণ শান্ত একেবারে ।
দিনে দিনে মুছে যাবে তার সকল স্মৃতি ,
এ বাড়িতে পড়বে আবার নতুন পায়ের চিহ্ন ।
একই বীণার তারে বাঁধা তার আমার গীতি,
আজকে হতে আমার থেকে তার জীবন ভিন্ন ।
আজকের এই শুভ দিনে সবার আশীর্বাদে,
কেটে যাক অনাগত সকল অভিশাপ।
স্নেহ, প্রেম -ভালবাসার শুভ সংবাদে ,
আমার বোনের কোমল হৃদয়ে ফুটুক লাল গোলাপ।
----------------
রাজশাহী
২৭/০২/১৯৯৫