দেখেছিলাম তোমাকে গোধূলি লগণে আনমনে
হতভম্ব আমার দৃষ্টি, অপূর্ব কমল সুর্যালোকের
রক্তিম আভায় তোমার এলোচুল, মুখ-উচ্চারিত
দু-একটি বাক্যেই আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছিলে
শিশির কনার মতন, আমার উন্মুক্ত হৃদয়ের
বদ্ধ কুঠুরিতে কড়ানেড়ে আচম্বিতে।


পথ চলে আপন গতিতে তুমি চলে গেলে
সলজ্জ্য মুখ খানা ছেপে লেটার প্রেসে কলবের মাঝে
ভরা জ্যোৎস্নায় ভাসিয়ে তীব্র বাসনার অতৃপ্ত ছোঁয়ায়
বিন্দু বিন্দু ঘামে সিক্ত স্বপ্নময় আবেশে ডুবিয়ে
ভালোলাগার জোতির্ময় নির্বাকতার প্রারম্ভিতে।


তখন পৃথিবী অন্যরকম ছিল, কৈশোরের আনুরক্তি
অস্থিরতায় ভরা নিঃসঙ্গ বিকেল, মুহুর্তের রেশ
প্রতিনিয়ত কি এক সুখ-মিশ্রিত বিষ জ্বালা,
তোমাকে পাবার ও আপন কথা বলবার আকাঙ্ক্ষায়
স্মৃতিপটে তোমার মুখচ্ছবির বিনোদ ছোঁয়ায় তনয়া
মন ঘরে, নির্ঘুমে কেটে গেছে সহস্র রাত।


তুমি চলে যাচ্ছো, হৃদয়ে কল্লোল তুলে তোমার মুখশ্রী
রৌদ্রদগ্ধ চোখ, পায়ে চৈত্রের বাতাস যেন নিভাজ স্বপ্ন
সেদিন কি অমন অপরূপ জোতির্ময় দ্যুতি দেখেছিলাম তোমাতে
যেন সদ্য প্রস্ফুটিত মল্লিকা দেখার অনুভূতি, যেমন অপার্থিব
আলোর মোহে পতঙ্গের আগুনে ঝাপ দেওয়ার আকুতি,
তেমনি আমার মনেও জেগেছিল তোমার সান্নিধ্যের লোভ,
মুহুর্তেই বুঝেছিলাম উন্মত্ত ভালোলাগা আমার হৃদয়ে।


তোমায় প্রথম দেখেই বুঝেছিলাম হৃদয়ে আমার ঘূন ধরেছে
ভালোলেগেছে তোমায় নিজের অজ্ঞাতে এক মুহুর্তের দেখাতেই
হৃদয়ের সর্বত্র তোমার প্রতিমা, অথচ ছিলে তুমি বরাবর অচেনা
নির্জলা দুপুরে ভরা শ্রাবনের তিলোত্তমা তুমি যেন অপরাজিতা
প্রথম দেখাতেই আমার একাকিত্বের আয়নার তুমি একচিলতে রোদ্দুর
করেছো হৃদয় ব্যকুল, স্বপ্নের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়েছো অচিন সমুদুর
এ যেন ভালোলাগায় আকুল হৃদয়ের উচ্ছল ঝর্নার জলের উত্তাল স্রোত।


এরপর কেটেগেল অগোনিত দিন, ক্রম-বর্ধ্মান অপেক্ষার ঋণ
না পেয়ে তোমার দেখা, সহস্র জোস্নার মাঝেও বাজে বীণ
স্বপ্নের বিপরীতে তোমাকে না বলা কথায় মন হয় সঙ্গিন
ক্রমশই বেড়ে-চলে ভালোলাগার দ্বিধান্বিত অনন্ত অপেক্ষা
একটাই প্রশ্ন মনে কবে আসবে সুদিন?


আমার শুকিয়ে যাওয়া মরুপথে তুমি ছিলে না ধরা-ছোয়ায়
অতঃপর কোন এক শুভক্ষনে ছলে বলে কৌশলে বলেছিলাম
তোমায় আমি ভালোবাসি, তোমার জন্যেই মরতে পারি
তুমিই আমার নীরবতায় মোড়া উন্মত্ত যৌবন উপচে পড়া আগুন
আমি ঘর ছাড়া পথের বাউল, অনন্ত হাটা দীর্ঘ পর্যটন
না জেনে না বুঝেই ভালোবাসার মানে, লোকলজ্জা ঝেড়ে মুছে
ভালোলাগাকেই ভালোবাসা মনে করে আমার সহজ স্বীকারোক্তি
আমি তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।


তোমার প্রশান্ত সুন্দর চঞ্চল নিষ্কলুষ চোখ, অনাবিল হাসি
আমার হিয়ার মাঝে ঝংকার তুলে ভালোলাগার জানান দিয়েছে
ভেবেছি এটাই ভালোবাসা, তাইতো এত পাগলামি।
তোমায় একবার ভালোবাসি বলবো তার জন্যে কত কল্পনা
কত শত আলোচনা, নিরন্তর ভাবনা, কেনা-বেচা, আলোড়ন
কিভাবে মিটাই প্রয়োজন, আসন্ন শুভক্ষণ, কতোই না আয়োজন
শুধু একবার তোমায় বলবো ভালোবাসি, তোমার জন্যে মরতে পারি
ভালোবাসার সংজ্ঞা না হয় নাই বা জানি, ভালোলাগাকেই ভালোবাসা জ্ঞ্যানী।


ভালোবাসা সন্ধনিতে একাকি রাজপথে আমার নিঃসঙ্গ পথচলা
আর পথের অন্তরালে তুমি, তোমার ছায়া; নিস্তব্ধ দ্রোহের মায়াজালে
শূন্যতার প্রতিশ্রুতি আমি শুধু অন্ধকার দেখি, চারিদিকে অন্ধকার
অনিবার তোমার কথাই ভাবি, হৃদয়ে আঁকা তোমার মুখচ্ছবি।


বাস্তবতার অস্পৃশ্য ছোঁয়ায় হৃদয় আমার সিক্ত, আনুরক্ত, মলিন
শাশ্মত ধ্রুপদী মায়ার অদৃশ্য আঘাতে আমার ছেলেবেলার স্বপ্নগুলো
খেই হারিয়েছে, ঝরে পড়েছে, স্বকীয়তা হারিয়েছে, তোমায় সাথে নিয়ে,
মনে পড়ে তোমায় লিখা শেষ চিঠিখানা, লাইব্রেরির সামনে তোমায় দেয়া
তাৎক্ষনিক তোমার পড়া দেখে আন্দোলিত হয়েছে আমার মন, সময়ের বিবর্তনে
আজ আমার হাসি পায় স্মৃতিপটে ভেসে উঠলে, আপন মনে হেসেই যাই,
আজ আমি ভালোবাসা আর ভালোলাগার পার্থক্য বুঝি, হয়তোবা তুমি আগেই বুঝেছো
সময়ের গাঢ় অন্তঃপুর, সাত ছিদ্রের সূর্য্য, কালের বিবর্তনে আমায় ভেঙে-চুড়ে
আবার নতুন করে গড়েছে, সম্পুর্ন নতুন এক রূপ দিয়েছে।


আজকাল কাওকে ভালো-লাগলেই বলি না, তোমায় ভালোবাসি
এমনকি ভালোবাসলেও না, আজ আমি জানি ভালোবাসা প্রকাশ্য নয় সর্বদা
সকলে ভালোবাসা বোঝেওনা, তবুও হৃদয়ের এক কোণে সুক্ষ এক ব্যথা অনুভব করি
বারবার বলি আমি নাই, আমি না, হৃদয়, হৃদয় বোঝে না।


০১/০৩/২০১৬