কিন্তু এখনো ভেবে অবাক হই এত সুন্দর করে কেউ কাঁদতে পারে
( শেষ অংশ )
কিছুদিন পরের ঘটনা ---
বাসে উঠেছি জেলা শহরে যাব বলে ।
খুবই খারাপ মানের বাস –কোন রকম চাকা ঘোরে আরকি ।
ছোট ছোট সিট –এদিক উদিক তাকিয়ে একটি খালি পেলাম ।
একদিকে একটি বোরকা পরা মহিলা খুব অল্প জায়গা নিএ বসে আছেন ।
আমি বলাম অন্যকেউ আছে আপনার সাথে ? মাথা নাড়িয়ে বললেন নেই –
একটু সঙ্কোচের সাথে ভদ্র দুরত্তে বসার চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু সিটের মহাত্যে সে চেষ্টা বার বার বিফল হচ্ছিল ।
চারিদিকের শোরগোল – দুএকজন পরিচিতর আসা যাওয়া কুশল বিনিময়
রাস্তার বেহাল অবস্থার সাথে যুদ্ধ করতে করতে আর মনের
মধ্য এক বিশাল প্রস্ন চেপে রেখে আমরা চলছি ।
আধ ঘণ্টা পার করেছি- বাসে উঠেছি । আর ও ঘণ্টা দুয়েক বসে থাকতে হবে ।
হটাত করেই পাশের থেকে মুখের আড়াল না খুলেই -
মনে হল পাখীর সুরে সুর মিলিয়ে বলল আমি আপনাকে চিনি ।
চারিদিকের শোরগোল হইহুল্লোড় আর কিছু আমার কানে লাগছিলনা –
শুধু একটি কথাই আমার কানে বাজতে লাগলো আমি আপনাকে চিনি ।
বুকটা ধক করে কেঁপে উঠল – শঙ্কা নিএ জিজ্ঞেস করলাম তাই ? কিভাবে?
আবার সেই বিমোহিত সূরা’র কণ্ঠে ওনার স্বামীর নাম বললেন ।
ভয় পেলাম মনে মনে – এমনিতে বললাম ও তাই ,উনি কেমন আছেন ,কোথায় তিনি ?
ওনার ঢাকায় বদলী অর্ডার হয়েছে হটাত করে –আজ সকালেই উনি রওনা করেছেন
আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি , আপাতত ওখানে থাকব ।
কৌতূহল আর একধরনের অপরাধী মন নিএ চুপ করে বসে আছি অনেক ক্ষণ ।
আচ্ছা আপনি সেদিন কোন কথা না বলে কেন চলে এলেন ?
বললাম এমনি – ভাল লাগেনি ।
চুপ হয়ে রইলাম ।
বাস জেলা শহরে ঢুকেছে – একটু পরেই নামবে সবাই ।
ও আমাকে বলল যদি কোন জরুরি কাজ না থাকে আমাকে
একটু রিক্সায় করে বাড়ি পৌঁছে দিবেন ?
( ঝড়ে ঘর ছেড়েছি গাছে উঠবো বলে – শুধু মৃত্যুই পারে বাঁচাতে )
রিক্সায় উঠলাম দুজনে –হুট লাগিয়ে মুখের কাপড় সরিএ নিএ
আলতো একটু হাসির রেখা ফুটিয়ে আমার দিকে চাইল ।
শ্যামা মুকখানি গোছানো নরম এক স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে
অদ্ভুত এক আবেশে জড়িয়ে আছে ।
বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারিনি –নামিএ নিয়েছিলাম আলতো করে ।
বয়স আমার চেয়ে বছর খানেক ছোট হবে ।
কোন এক সময় আমার একটি হাত ওর দুহাত দিয়ে ধরে কোলের
কাছে নিএ বসে রইল – চুপ করে বসে রইলাম ।
রাত হল বাড়ি পৌঁছতে ( ফিরিবার পথ নাই ) ।
আলো অন্ধকারের সে খেলায় অনভিজ্ঞ আমি তার অভিজ্ঞতার
আলোয়ে আলোকিত পুলকিত স্পর্ধিত হয়েছিলাম ।( ও পথ চিনেছি বারে )।।
খবর পেলাম ওর স্বামী আসছে ওকে নিতে ,
আমাকে তার আগেই যেতে হবে তার সাথে শেষ দেখা করতে ।
দুঃখ প্রেম ভালবাসা ওর অভিব্যাক্তি সব অসয্য মনে হলে –
প্রচণ্ড আঘাত করতে চাইলাম তাকে – ছিরে ফেলতে চাইলাম তাকে ।
ক্ষুধার্ত সিংহ যেমন করে শেষ আঘাত করে আমিও প্রচণ্ড খিপ্রতায়
আঘাত করলাম তাকে ।
শিকারের রক্ত পান করে যে ভাবে সিংহ আমিও কান পেতে
রইলাম – সেই সুর শুনব বলে । চৈত্রের খরতাপে যে ভাবে এক ফোঁটা
বৃষ্টির জন্য হাহাকার নিএ বসে থাকে চাষার বুক ।
আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম – ও আমার তৃষ্ণা মিটিয়ে ছিল ।।